কুরআন বিশ্ববাসীদের জন্য হেদায়েত আর সত্য এবং মিথ্যার মধ্যে ফয়সালাকারী। প্রাচীন আরবি ভাষায় কুরআন নাযিল হয়েছে। কুরআনের ভাষা শেখা প্রত্যেক মুসলমানের স্বপ্ন; কিন্তু যেসব ভাই বোনেদের কর্মব্যস্ততার কারণে কুরআনের ভাষা শেখা সম্ভব নয় তাদের জন্য কমপক্ষে অনুবাদের সাহায্যে কুরআনের হেদায়েত গ্রহণ করা অপরিহার্য।
অনুবাদের সাহায্যে যারা কুরআন অধ্যয়ন করতে চান তাদের জন্য কিছু প্রয়োজনীয় টিপস এখানে উল্লেখ করছি:
১. প্রথমে একটি মানসম্মত অনুবাদ বাছাই করে নিন।
২. পূর্ব থেকে লালন করে রাখা সকল চিন্তা ও ধ্যান-ধারণা আপাতত মাথা থেকে সরিয়ে নিন। কুরআন আপনাকে যে চিন্তা ও ধারণা দিবে তা নির্দ্বিধায় মেনে নেয়ার জন্য দৃঢ় প্রত্যয় নিন, যদিও তা আপনার আজন্ম লালিত চিন্তার বিপরীতে যায়। আপনার লালিত চিন্তার জন্য কুরআন থেকে রসদ (material) সংগ্রহ না করে; কুরআনের প্রদত্ত চিন্তা দিয়ে আপনার চিন্তার সংশোধন করুন।
৩. ভাসাভাসা দৃষ্টিতে চোখ না বুলিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করুন। চিন্তাভাবনা ছাড়া কুরআনের অনেক কথাই আপনার কাছে স্পষ্ট হবে না।
৪. কুরআনের ঐতিহাসিক অবস্থান ও প্রেক্ষাপট মাথায় রাখুন। নবী মুহাম্মদ (সা.) প্রথমবারের মতো মানুষকে আল্লাহর দ্বীন দেননি। বরং এ দ্বীনের সূচনা হয়েছিল হযরত আদম (আ.) থেকে। ইবরাহীম (আ.)-এর সময়ে এসে এর মোটামুটি একটি রূপরেখা দাঁড়িয়ে যাওয়ায় এই ধারাটিকে ‘মিল্লাতে ইবরাহীম’ নাম দেয়া হয়। এই ধারাটিকে নবী (সা.) আল্লাহর হুকুমে পুনর্জীবিত করেছিলেন। এই ধারাটিকে আল্লাহ বহাল রাখার নির্দেশ দিয়েছেন এবং সেই সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। আর এ ধারারই একটি অংশ হচ্ছে সুন্নাত। যেখানে নামাজ, যাকাত, হজ্ব, রোজা, নিকাহ-তালাক, পাক পবিত্রতার বিষয়সহ অন্যান্য অনেক বিষয় রয়েছে। কুরআনে এগুলোর বিস্তারিত পদ্ধতি আপনি খুঁজে পাবেন না। এগুলো বিস্তারিতভাবে সুন্নাতে এসেছে যা রাসুল (সা.) থেকে সাহাবা হয়ে এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের কাছে নিরবিচ্ছিন্নভাবে এসেছে। কুরআনে শুধু এগুলোকে বহাল রাখার নির্দেশ এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা পাবেন।
৫. আল্লাহর দ্বীনকে না মানার কারণে একজন রাসুল আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর জাতিকে এই দুনিয়াতেই একটি শাস্তি আসার ব্যাপারে কীভাবে সতর্ক করেছেন এবং শেষপর্যন্ত এই শাস্তিটি কীভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে; কুরআন এই ধাপগুলোর একটি বিবরণ। এই কথাটিও মাথায় রাখুন। কুরআনের পুরো আলোচনাই এই শাস্তি কেন্দ্রিক। আর এভাবে আল্লাহ কিয়ামতের ছোটো একটি নমুনা এই দুনিয়াতেই দেখিয়ে দিয়েছেন। এর ফাঁকে ফাঁকে কুরআনে আল্লাহর দ্বীনের বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে।
৬. মানুষের সৃষ্টিগত স্বভাবের মধ্যে স্রষ্টার পরিচয় ও ভালো-মন্দের নৈতিকতাবোধ দিয়ে দেয়া হয়েছে। কুরআন এই ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে কথা বলে।
৭. মনে রাখুন, কুরআন একটি ধর্মগ্রন্থ। কুরআনের আলোচ্য বিষয় ধর্ম এবং শুধুই ধর্ম। স্রষ্টার দেয়া ধর্ম পালন করে মানুষ কীভাবে পরকালে জান্নাতে যেতে পারে এটাই কুরআনের বিষয়বস্তু। সুতরাং কুরআনে আপনি পার্থিব জ্ঞান বা বিজ্ঞানের মৌলিক আলোচনা সন্ধান করতে যাবেন না। পার্থিব জ্ঞান বা বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য আল্লাহ মানুষকে বুদ্ধি দান করেছেন । হ্যাঁ, প্রাসঙ্গিকভাবে কোনো আলোচনা চলে আসতে পারে।
লেখক: মাওলানা উমর ফারুক
(শিক্ষক ও অনুবাদক)
Leave a Reply