সম্ভবত ২০০৫ সালের দিকে, আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসিন হলে থাকি। টিউশনি শেষে হলে ফিরেছি, গেটের সামনেই দেখি বিশাল এক জটলা, প্রচন্ড হট্টগোল। প্রায় ৩০-৪০ জন ছাত্র মিলে একজনকে গণধোলাই দিচ্ছে। কাছে গিয়েই রহস্য জানতে পারলাম, লুঙ্গি চুরি করতে গিয়ে চোর ধরা পরেছে; আর তাকেই সবাই খুব উৎসাহ নিয়ে নির্মমভাবে পেটাচ্ছে!
আমি চেষ্টা করলাম থামানোর জন্য, উল্টো আমাকেই ভুল বুঝলো সবাই। একজন বলেই ফেলল, “আপনি চোরের হয়ে দালালি করছেন কেন?”
চোরটা হয়ত দুই-তিনশ টাকা দামের একটা লুঙ্গি চুরি করেছিল। আমাদের আশেপাশে চেনা-পরিচিত দুর্নীতিবাজরা প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি করে। তাদের সামনে কথা বলার জন্য একজনকেও খুঁজে পাওয়া যায় না!
আর ছিচকে অপরাধীকে শাস্তি দেয়ার জন্য আমরা সবাই উন্মুখ হয়ে থাকি! পত্রিকার পাতা খুললে প্রায়ই দেখতে পাই গণপিটুনিতে মৃত্যু। সম্ভবত গত বছর একজন ভদ্রমহিলাকে স্কুলের সামনে ছেলেধরা সন্দেহে বীর বাঙ্গালী পিটিয়ে মেরে ছিলো!
মৃত্যুদণ্ডের ব্যাপারে ইসলাম কী বলে?
পবিত্র কুরআনে আমরা দেখতে পাই
مَنۡ قَتَلَ نَفۡسًۢا بِغَیۡرِ نَفۡسٍ اَوۡ فَسَادٍ فِی الۡاَرۡضِ فَکَاَنَّمَا قَتَلَ النَّاسَ جَمِیۡعًا ؕ وَ مَنۡ اَحۡیَاهَا فَکَاَنَّمَاۤ اَحۡیَا النَّاسَ جَمِیۡعًا
নরহত্যা অথবা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ করার কারণ ব্যতীত যদি কেউ কাউকে হত্যা করে সে যেন দুনিয়ার সকল মানুষকেই হত্য্য করল। (সূরা মায়দা: ৩২)
অর্থাৎ শুধু দুটি অপরাধেই এক জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া যেতে পারে:
১. মানুষ খুন করার অপরাধে
২. সমাজে (ভয়ংকর) বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে
এ দুটি কারণ ছাড়া আর কোনো অপরাধে মানুষকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া যাবে না। অথচ আমরা সামান্য লঘু পাপে সর্বোচ্চ দণ্ড দিয়ে থাকি।
লেখক: মঞ্জুর এলাহী
Leave a Reply