মুসলিমরা কি কাবাঘর এবং হাজরে আসওয়াদ-এর পূজা করে?

মুসলিমরা কি কাবাঘর এবং হাজরে আসওয়াদ-এর পূজা করে?
Moderator Avatar

মুসলিমরা কাবাঘর এবং হাজরে আসওয়াদ-এর পূজা করে না। একজন মুসলিম কেবল মহান আল্লাহর ইবাদত করে। কেউ যদি মনে করে আল্লাহ কাবাঘরের মধ্যে থাকেন তাহলে এটি ভুল ধারণা। কাবাঘর একটি মসজিদ। পবিত্র কুরআনে কাবাঘরকে الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ (মসজিদুল হারাম) বলা হয়েছে।

হযরত ইব্রাহিম (আ) কাবাঘর বা মসজিদুল হারাম তৈরি করেছেন গোটা পৃথিবীর মসজিদের মার্কাজ হিসেবে। মসজিদুল হারামকে ঘিরে যে শিষ্টাচার ইসলামে নির্ধারণ করা হয়েছে তা মূলত প্রতীকী। যেমন, আমাদের জাতীয় পতাকা; এই পতাকা মূলত একটি কাপড়ের টুকরো। এই কাপড় বাজার থেকে কেনা হয়। কিন্তু যখন এটি জাতীয় পতাকা হিসেবে উড্ডয়ন করা হয়; তখন এর সম্মানে আমরা দাঁড়িয়ে যাই। কারণ এই সামান্য কাপড়ের টুকরো আমাদের দেশপ্রেমের প্রতীকী রূপ হিসেবে প্রকাশ পায়। এ কারণে আমরা জাতীয় পতাকার এত সম্মান করি। এমন অসংখ্য বিষয় আছে যা আমাদের আবেগের প্রতীক হিসেবে প্রকাশ পায়। বন্ধুর সাথে দেখা হলে আমরা করমর্দন করি। এর মাধ্যমে বন্ধুর প্রতি বন্ধুর ভালোবাসার প্রতীকী প্রকাশ ঘটে। নামাজে আমরা রুকু এবং সিজদা করি; এর মাধ্যমে আমরা আল্লাহর আনুগত্যের প্রতীকী প্রকাশ করে থাকি।

হাজরে আসওয়াদ মূলত কাবাঘর নির্মাণে ব্যবহৃত প্রথম পাথরগুলোর মধ্যে একটি। যা কাবাঘরের পাশে স্থাপন করা হয়েছে। হাদিসে এই পাথরকে الأسود يمين الله (জমীনের বুকে আল্লাহর ডান হাত) বলা হয়েছে। অর্থাৎ এ পাথরকে স্পর্শ করার মাধ্যমে প্রতিকীভাবে আমরা আল্লাহর আনুগত্যের শপথ করি। এজন্য তাওয়াফ করার সময় আমরা দোয়া করি, হে আল্লাহ আপনার প্রতি ঈমানকে জীবিত করছি এবং আপনার সাথে কৃত অঙ্গীকারের আনুগত্য করছি।

তৎকালীন সময়ে যদি কারো সাথে কেউ আনুগত্যের শপথ করত তাহলে হাতের উপর হাতে রেখে চুমু খেতো। আল্লাহ নিজের জন্যও এ ব্যবস্থা নির্ধারণ করেছেন। হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করা এবং চুমু খাওয়ার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নিকট অঙ্গীকারবদ্ধ হই। এটি কোনো পাথর পূজা নয়। এটি আল্লাহর প্রতি বান্দার আনুগত্যের প্রতিকী প্রকাশ। যারা মূর্তি পূজা করে, এই মূর্তিগুলোর মধ্যে প্রকৃতপক্ষে যদি কোনো হাকিকত থাকতো তাহলে এটি গুনাহ হতো না। মূর্তি পূজার মধ্যে কোনো হাকিকত নেই। আল্লাহ যদি কোনো পাথরের মাধ্যমে প্রতিকীভাবে কিছু প্রকাশ করতে চাইতেন তাহলে এটি সমস্যার বিষয় ছিলো না। মূর্তি পূজা কেন এত বড় গুনাহের কাজ? কারণ মূর্তিপূজারীরা মূর্তিগুলোর মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার নামে মিথ্যা ছাড়ায়।

এই মূর্তিগুলোকে আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো বিশেষত্ব দান করা হয়নি। কিন্তু মূর্তিপূজারীরা এগুলোকে আল্লাহর সাথে শরিক করে। এই মিথ্যাচার করার কারণেই মূলত মূর্তিপূজা হারাম। যেহেতু আল্লাহর কোনো শরিক নেই; সুতরাং আল্লাহর সাথে মূর্তি বা অন্য কিছু শরিক করা শিরক এবং সব থেকে বড় গুনাহ।

(উস্তাদ জাভেদ আহমেদ গামিদির লেকচারের আলোকে)

অনুবাদ: আলমানার ইনস্টিটিউট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *