পুরুষের বহুবিবাহ প্রসঙ্গে

পুরুষের বহুবিবাহ প্রসঙ্গে
Moderator Avatar

ইসলামে পুরুষের বহুবিবাহ যে শর্তসাপেক্ষে বৈধ এটা নিয়ে সম্ভবত কারো দ্বিমত বা সন্দেহ নেই। প্রশ্নটা হলো, বহুবিবাহ উত্তম কি না, সুন্নাহ কি না বা মুস্তাহাব কি না? পুনরুজ্জীবিত করতে হবে, প্রমোট করতে হবে, উৎসাহিত করতে হবে এরকম কোনো কাজ কি না?

এই প্রশ্নের উত্তর হলো, না, এটা কোনো উত্তম, মুস্তাহাব বা সুন্নাহ পর্যায়ের কাজ না। কুরআন হাদীসের কোথাও বহুবিবাহকে উৎসাহিত করা হয় নাই। ইসলাম বিবাহের সুযোগ সীমিত করেছে। রসূল সা. অধিক সংখ্যক স্ত্রী থাকলে কমানোর নির্দেশ দিয়েছেন, কাউকে কাউকে বহুবিবাহে বাঁধা দিয়েছেন, কিন্তু একজন স্ত্রী থাকার পর স্ত্রীর সংখ্যা বাড়ানোর নির্দেশ বা উৎসাহ দিয়েছেন এ রকম কোনো দৃষ্টান্ত বা নজীর পাওয়া যায় না।

এটা মর্ডানিজম বা খ্রিস্টবাদ প্রভাবিত কোনো বক্তব্য নয়। এ ব্যাপারে পূর্ববর্তী বহু ফকীহের স্পষ্ট মত পাওয়া যায়। ইমাম শাফেয়ী রহ. বলেছেন, পুরুষের জন্য এক স্ত্রী গ্রহণ করাই উত্তম, যদিও একাধিক স্ত্রী গ্রহণের অনুমতি রয়েছে। দলিল হলো কুরআনের আয়াত, ‘যদি তোমরা ভয় করো যে ন্যায় বিচার করতে পারবে না তাহলে এক স্ত্রীই গ্রহণ করো।’
-আল বায়ান ফী মাযহাবিল ইমাম শাফেঈ (১১/ ১৮৯)

হাম্বলী ফকীহ আলাউদ্দীন মারদাওয়ী রহ. বলেছেন, গুনাহে জড়িয়ে পড়ার আশংকা না থাকলে একের অধিক স্ত্রী গ্রহণ না করা মুসতাহাব।
আল-ইনসাফ (৮/১৬)

হাম্বলী ফকীহ হাজ্জাওয়ী বলেছেন, একাধিক স্ত্রী গ্রহণ না করা মুস্তাহাব। কারণ একাধিক বিয়ে করলে হারাম কাজে জড়িয়ে পড়ার আশংকা থাকে।

সংখ্যাগরিষ্ঠ ফকীহরা একমত যে, নবী সা. এর বহুবিবাহ মুসলমানদের জন্য অনুসরণীয় নয়, এটা তার বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এ ব্যাপারে শুধু আসহাবে যাওয়াহের আলেমদের ভিন্নমত পাওয়া যায়। যাদের সংখ্যা খুবই কম ছিলো এবং এই যুগে তাদের কোনো অনুসারী নাই।

আমাদের দেশে যারা বহুবিবাহকে উৎসাহিত করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন, এটাকে সুন্নাহের পুনরুজ্জীবন ইত্যাদি বলছেন, তারা আসলে কাদের মত অনুসরণ করে বা কোন দলিলের ভিত্তিতে এ রকম বলছেন জানি না। এই ব্যাপারে তাদের উৎসাহ এত বেশি দেখা যায় যে তারা চরম অসমতাসহ বহুবিবাহের পক্ষেও বগল বাজান, যেটা কুরআন হাদীসের আলোকে সুস্পষ্ট হারাম এবং যে কাজের জন্য হাদীসে কঠোর শাস্তির সতর্কবাণী এসেছে। একজন তো দেখলাম বলছেন, সামর্থ্য থাকলে নাকি বহুবিবাহ ওয়াজিব। যেই কাজ মুস্তাহাব হওয়ার কোনো দলিল নাই, সেই কাজরে তিনি ওয়াজিব বানিয়ে ফেলেছেন। এগুলো তাহরিফ বা শরিয়ত-বিকৃতি ছাড়া কিছু নয়।

লেখক: ফারুক ফেরদৌস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *