প্রশ্ন: আপনি বলেছেন যে আমাদের জীবনের মূল উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য খিলাফাহ অপরিহার্য নয়। তবে বাস্তবতার দৃষ্টিকোণ থেকে আপনার মতে, আধুনিক জাতি-রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এটি আদৌ কি সম্ভব? অথবা মুসলিমদের জন্য এর কোনো ভিন্ন রূপ থাকা কি উচিত?
উত্তর: যদি খিলাফাহ বলতে খিলাফায়ে রাশিদাহ বোঝায়, যেমন আবু বকর এবং উমর (রা)-এর সময় ছিল। তাহলে এটি খুবই সংক্ষিপ্ত সময় ছিল, প্রায় ৩০ বছর। খিলাফায়ে রাশিদাহ ১১ হিজরি থেকে ৪০ হিজরি (৬৩২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ৬৬১ খ্রিষ্টাব্দ) পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। এর পর থেকে মুসলিমরা আর প্রকৃত খিলাফাহ স্থাপন করতে পারেনি, তারা রাজতন্ত্রের মাধ্যমে শাসন করেছে। আল্লাহ কখনো মানুষকে এ নির্দেশ দেননি যে তারা এই রকম একটি খিলাফাহ স্থাপন করবেই। খিলাফায়ে রাশিদাহ ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বিশেষ উপহার, যা তিনি নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এটি মূলত ইবরাহিম (আলাইহি সালাম)-এর ভূমি এবং মধ্যপ্রাচ্যকে সুরক্ষিত করার জন্য ছিল।
এই ৩০ বছরের পর মুসলিমদের রাজা ছিল—কখনো ভালো, কখনো খারাপ। কখনো একক রাজত্ব ছিল, আবার কখনো তা বিভক্ত ছিল। অন্যান্য জাতির সাথে যা ঘটেছিল, মুসলিমদের সাথেও তাই ঘটেছে। অনেকেই মনে করেন যে খিলাফাহ ১৯২৪ সালে অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের মাধ্যমে বিলুপ্ত হয়েছে। কিন্তু এটা ভুল ধারণা। অটোমান শাসক এবং অন্যান্য শাসকরা আবু বকর বা উমরের মতো ছিলেন না। উদাহরণস্বরূপ, অটোমান সাম্রাজ্যের ইতিহাস পড়লে দেখা যাবে, তাদের আলেমরা ফতোয়া দিতেন যে রাজা ক্ষমতায় আসার পর তার ভাইদের হত্যা করা বৈধ, যাতে রাজ্যে স্থিতিশীলতা থাকে। এটি এমন কিছু নয় যা নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বা কুরআন আমাদের শিক্ষা দিয়েছে। কিন্তু তা-ও তারা করত।
প্রশ্ন: তাহলে এই পরবর্তী “খিলাফাহ”-এর সময় থেকে কোনো ভালো দিক নেয়া সম্ভব কি?
উত্তর: হ্যাঁ, ঐ সময়ে অনেক ভালো বিষয়ও ছিল, তবে খারাপ দিকও ছিল। আজকের দিনে মুসলিমদের প্রধান উদ্বেগ খিলাফাহ নয়, তারা গৌরব চায়, পৃথিবীতে ক্ষমতা ও স্বীকৃতি চায়। কিন্তু এটি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে মূল বিষয় নয়। যদি মুসলিমরা সত্যিই আল্লাহর আনুগত্য করতে চায়, তবে তারা খিলাফাহ বা রাজনৈতিক ক্ষমতা ছাড়াই তা করতে পারে। গত ২০০ বছরের মুসলিম ইতিহাস দেখলে বোঝা যায়, বেশিরভাগ প্রচারক ও আন্দোলন গৌরব অর্জনের দিকেই মনোযোগ দিয়েছে। কিন্তু একই সময়ে, ৯০% মুসলিম নামাজ পড়ে না। এটি আল্লাহর কাছে বড় উদ্বেগের বিষয় যে মানুষ তাঁর ইবাদত ও আনুগত্য করছে না।
প্রশ্ন: এই রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রতি এই প্রবণতা কি অন্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে দেখা যায়?
উত্তর: হ্যাঁ, আমরা এটি ইহুদি ইতিহাসেও দেখতে পাই। উদাহরণস্বরূপ, তাদের জেরুজালেমে ওয়াইলিং ওয়ালের প্রতি যে আবেগ, তা তাদের সাম্রাজ্য ও রাজনৈতিক ক্ষমতা হারানোর সঙ্গে জড়িত। আল্লাহর আনুগত্য হারানোর কারণে নয়। আজকের মুসলিমরাও একইভাবে আচরণ করছে। ক্ষমতা ও আধিপত্যের প্রতি মনোযোগ দিচ্ছে, অথচ আল্লাহর সাথে সম্পর্ককে উপেক্ষা করছে।
প্রশ্ন: তাহলে মুসলিমদের কী বিষয়ে মনোযোগী হওয়া উচিত?
উত্তর: আল্লাহর পদ্ধতি আলাদা। তিনি চান আমরা তাঁর প্রতি অনুগত হই। কবি ইকবাল এটি খুব সুন্দরভাবে প্রকাশ করেছেন: যদি খিলাফাহ চলে যায়, তবে যেতে দাও, কিন্তু আল্লাহকে ছেড়ে দিও না। এই মানসিকতা মুসলিমদের গ্রহণ করা উচিত, তাদের বিশ্বাস ও আনুগত্যকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে রাখা।
শায়খ আকরাম নাদভী
(লেখাটি সংগ্রহীত)
Leave a Reply