রাষ্ট্রীয় আইন
পাকিস্তান আমলে মুসলিম পারিবারিক আইন প্রণয়ন করা হয়, যা বাংলাদেশে এখনো বহাল আছে। মুসলিম পারিবারিক আইন, অধ্যাদেশ ১৯৬১ এর ৪ ধারায় বলা হয়েছে: “উত্তরাধিকার ৪. যদি উত্তরাধিকার প্রতিষ্ঠার আগে প্রস্তাবিত ব্যক্তির কোনো পুত্র বা কন্যার মৃত্যু ঘটে, তাহলে ঐ পুত্র বা কন্যার জীবিত সন্তানরা (যদি থাকে) তাদের পিতা/মাতার অংশের সমপরিমাণ উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত হবে।”
অর্থাৎ, এই আইনের দৃষ্টিতে, যদি কারো মৃত্যুর পূর্বে তার কোনো সন্তান মারা যায়, তাহলে সেই মৃত সন্তানের সন্তানরা (নাতি-নাতনীরা) তাদের পিতা বা মাতার স্থানে উত্তরাধিকার পাবে।
ইসলামি দৃষ্টিকোণ
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন:
“আল্লাহ তোমাদের সন্তানদের বিষয়ে তোমাদেরকে নির্দেশ দেন, এক পুত্র দুই কন্যার সমান অংশে পাবে।”
(সুরা নিসা: ১১)
এ আয়াতে সন্তানদের অংশ বর্ণনা করা হয়েছে। নাতি-নাতনীদের বিষয়ে কুরআনে সরাসরি কিছু উল্লেখ নেই। কিন্তু আয়াতে উল্লিখিত ‘আওলাদ’ শব্দ নাতি-নাতনীদেরকেও অন্তর্ভুক্ত করে। তাই ইসলামি ফকিহগণ সবসময় এ ব্যাপারে একমত ছিলেন যে, যখন সরাসারি কোনো সন্তান জীবিত থাকবে না, তখন নাতি-নাতনীরা সন্তানদের মতোই উত্তরাধিকার পাবে।
কিন্তু যখন কিছু সন্তান জীবিত থাকে, এবং কিছু সন্তান মারা যায়, তখন মৃত সন্তানদের জীবিত সন্তানরা (নাতি-নাতনীরা) কি সম্পত্তিতে অংশ পাবে? এ ব্যাপারে আমাদের প্রাচীন ফিকহের মত হলো, মৃত সন্তানদের জীবিত সন্তানরা এ অবস্থায় সম্পত্তিতে অংশ পাবে না। কারণ, সুরা নিসার আয়াত ১১-এ বলা হয়েছে: “তোমাদের পিতামাতা ও তোমাদের সন্তানদের মধ্যে উপকারের দিক থেকে কে তোমাদের অধিক নিকটবর্তী, তা তোমরা জানো না।” আয়াতের এই বাক্য অনুসারে মৃত ব্যক্তির নিকটতম আত্মীয়রাই তার সম্পত্তিতে অংশ পায়, আর সরাসারি সন্তান জীবিত থাকাবস্থায় তারাই মৃত ব্যক্তির নিকটতম আত্মীয়, তাই তারা থাকাবস্থায় নাতি-নাতনীরা পাবে না।
বর্তমান যুগের কোনো কানো গবেষক আলিম প্রাচীন ফিকহের এই মতের সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন। তারা বলেছেন, কিছু সন্তান জীবিত থাকলেও যে সন্তানরা মারা গেছে, তাদের সন্তানরা মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে তাদের পিতা/মাতা জীবিত থাকলে যেটুকু পেত, তার সমপরিমাণ অংশ পাবে। আমরা এই মতকেই প্রাধান্য দিই। কারণ, এ অবস্থায় নাতি-নাতনীরা তাদের মৃত পিতা/মাতার স্থলাভিষিক্ত হয়ে মৃত ব্যক্তির নিকটতম আত্মীয় হবে, যেমন কোনো সন্তান জীবিত না থাকলে হয়, জীবিত সন্তানদের কারণে তারা বঞ্চিত হবে না। এভাবে স্থলাভিষিক্ত হওয়ার বিষয়টি কুরআন থেকেও প্রমাণিত। সুরা নিসার শেষ আয়াত ১৭৬-এ সন্তান বা নাতি-নাতনী না থাকলে ভাই-বোনদেরকে সন্তানদের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে এবং সন্তানদের মতো তাদের অংশ দেওয়া হয়েছে।
লেখক: মাওলানা উমর ফারুক
কোনো ব্যক্তি জীবিত থাকা অবস্থায় তার সন্তান মারা গেলে নাতি-নাতনীরা কি তার সম্পত্তিতে ভাগ পাবে?

Leave a Reply