মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহার

admin Avatar

মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহারের গুরুত্ব ইসলামে অপরিসীম। কেবল মাতা-পিতা নয়, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, দরিদ্র এবং সমাজের অন্যান্য মানুষদের প্রতি ইসলাম আমাদের ভালো আচরণ করার নির্দেশ দিয়েছে।

আল্লাহ বলেছেন,

“তোমাদের প্রভু ফয়সালা করেছেন যেন তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারো বন্দেগি না করো এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করো। যদি তাদের মধ্যে কেউ বা উভয়েই তোমার সামনে বার্ধক্যে উপনীত হয় তবে তাদের প্রতি বিরক্তিসূচক কোনো শব্দ উচ্চারণ করো না, তাদেরকে ধমক দিয়ো না, তাদের সাথে সম্মানের সাথে কথা বলো। (সুরা বনি ইসরাইল: ২৩)

মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহারের তিনটি স্তর রয়েছে.

১. মাতা-পিতার কথা মান্য করা

এটি সদ্ব্যবহারের একটি মৌলিক দিক। মাতা-পিতা যখন কোনো কাজ করতে বলেন বা কোনো কিছুর দাবি করেন, তখন সন্তানের কর্তব্য হলো তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা এবং তাদের দাবি পূরণ করা। যে সন্তান মাতা-পিতার কথা মানে না, তার আচরণকে কোনোভাবেই ‘সদ্ব্যবহার’ বলা যাবে না। তাদের চাহিদা পূরণ করা এবং তাদের নির্দেশ পালন করা সদ্ব্যবহারের অংশ।

২. মাতা-পিতার প্রতি শিষ্টাচার বা শ্রদ্ধা প্রদর্শন

শিষ্টাচার হলো সমাজের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা। এর মধ্যে রয়েছে কথা বলার ধরন, শব্দচয়ন সুন্দর করা, কণ্ঠস্বর এবং শারীরিক অঙ্গভঙ্গি সুন্দর করা ইত্যাদি। প্রতিটি সমাজে  শিষ্টাচার প্রদর্শনের নিজস্ব মানদণ্ড রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলা ভাষায় বড়দের সাথে কথা বলার সময় সম্মানসূচক বহুবচন ব্যবহার করা হয়, যা ইংরেজি ভাষার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। সুতরাং শিষ্টাচার হলো সংস্কৃতি ও সমাজের স্বীকৃত উপায়ে মাতা-পিতার প্রতি বিনয় ও শ্রদ্ধা বজায় রাখা। মাতা-পিতার সাথে কোনো বিষয়ে অসম্মতি জানালেও, তা অত্যন্ত বিনয়ের সাথে জানাতে হবে।

৩. মাতা-পিতার সেবা করা

সেবা  বলতে বোঝায় পিতা-মাতার প্রয়োজন পূরণ করা এবং তাদের যত্ন নেওয়া। এই বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে যখন পিতা-মাতা বৃদ্ধ বয়সে উপনীত হন এবং নিজেদের দৈনন্দিন কাজ বা চাহিদা পূরণে সন্তানের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। সন্তানদের প্রধান কর্তব্য হলো, মাতা-পিতার স্বাস্থ্যগত চাহিদা, খাদ্য, পোশাক বা অন্য যেকোনো প্রয়োজন পূরণ করা।

এছাড়াও মাতা-পিতাকে সময় দেওয়া সন্তানের গুরুত্বপূর্ণ একটি কর্তব্য। বৃদ্ধ বয়সে অনেক মাতা-পিতা একাকীত্বে ভোগেন। মানসিক শান্তি ও বন্ধুত্ব তাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি। অনেক সন্তান হয়তো মাতা-পিতার আর্থিক প্রয়োজন মেটায় এবং তাদের প্রতি সম্মানও বজায় রাখে, কিন্তু তাদের সাথে সময় কাটাতে অবহেলা করে। সন্তানদের উচিত মাতা-পিতার পাশে বসে তাদের সাথে কথা বলা এবং তাদের সময় দেওয়া, যাতে তাদের মনে কোনো শূন্যতা বা অপূর্ণতা না থাকে।

ইসলামে মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহার কেবল কয়েকটি আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি একটি ব্যাপক ধারণা, যা তাদের কথা মান্য করা, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন এবং তাদের সকল প্রয়োজন, বিশেষ করে বৃদ্ধ বয়সে তাদের দেখাশোনা করা ও তাদের সাথে সময় কাটানোর মাধ্যমে পরিপূর্ণ হয়। এই তিনটি দিক সঠিকভাবে পালন করা একজন মুসলিমের নৈতিক ও ধর্মীয় কর্তব্য।

(উস্তাদ তালিব মহসিনের লেকচারের আলোকে)

অনুবাদ: আল মানার ইনস্টিটিউট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *