সম্প্রতি পাকিস্তান ও সৌদি আরবের মধ্যে প্রতিরক্ষা চুক্তি হয়েছে। এটি গত ৭৫ বছরের ইতিহাসে পাকিস্তানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই চুক্তি শুধু একটি দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা চুক্তি নয়, বরং এর ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক তাৎপর্য রয়েছে, যা মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তর ঐক্যের দিকে ইঙ্গিত করে।
মক্কা ও মদিনার সুরক্ষার দায়িত্ব কোনো নির্দিষ্ট জাতির উপর নয়, বরং এটি সমগ্র মুসলিম উম্মাহর দায়িত্ব এবং আল্লাহ মুসলমানদের এই দায়িত্ব পালন করার নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে এই বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই পাকিস্তানের এই প্রতিরক্ষা চুক্তির মাধ্যমে মক্কা ও মদিনার সুরক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করা কোনো নতুন বিষয় নয়। এই দায়িত্ব গ্রহণ করা প্রতিটি মুসলমানের ঈমানি কর্তব্য।
আরব উপদ্বীপের এই পবিত্র ভূমিকে আল্লাহ নিজেই নির্বাচন করেছেন এবং এটিকে তাঁর তাওহীদের কেন্দ্র হিসেবে মনোনীত করেছেন। এই অঞ্চলের একটি বিশেষত্ব হলো, এখানে অমুসলিমদের স্থায়ী বসবাসের কোনো সুযোগ নেই। এই দিক থেকে, মক্কা ও মদিনার বিষয়টি বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের সাংস্কৃতিক বা সামরিক জোট, যেমন খ্রিস্টান সভ্যতা বা ইউরোপীয় জাতিসমূহের ন্যাটো জোটের মতো নয়। এসব জোট সাধারণত সামরিক, অর্থনৈতিক বা সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে গঠিত হয়েছে। কিন্তু মক্কা ও মদিনার প্রতিরক্ষা ধর্মীয় মূল্যবোধের উপর প্রতিষ্ঠিত।
বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী নিজেদের প্রতিরক্ষার জন্য জোট গঠন করে থাকে। যেমন, ইউরোপীয় জাতিগুলো ন্যাটো জোট গঠন করেছে এবং সাদা চামড়ার জাতিগুলোও নিজেদের সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন চুক্তি করেছে। এমনকি সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (SCO) মতো আঞ্চলিক জোটও বর্তমানে রয়েছে। এ ধরনের জোট বা সংস্থাগুলো সামরিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে গঠিত হয়, যেখানে পারস্পরিক সহযোগিতা ও অভিন্ন স্বার্থ রক্ষাই মূল লক্ষ্য। মুসলিম বিশ্বেও বিভিন্ন সময়ে এই ধরনের সংস্থা গড়ে উঠেছে, যেমন অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কো-অপারেশন (OIC), যা আল-আকসা মসজিদে হামলার মতো ঘটনার প্রেক্ষাপটে গঠিত হয়েছিল। এই সংস্থাগুলো, যদিও বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা নিয়ে কাজ করছে, তবুও মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।
মুসলিম দেশগুলোর উচিত নিজেদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা, যা কমনওয়েলথের মতো একটি কাঠামো অনুসরণ করেও তৈরি করা যেতে পারে। এখানে প্রতিটি দেশ তাদের সার্বভৌমত্ব বজায় রেখে অভিন্ন লক্ষ্য ও স্বার্থে কাজ করবে। যেমন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড গ্রেট ব্রিটেনের রানী বা রাজার সাথে একটি নির্দিষ্ট সম্পর্ক বজায় রেখেছে। একইভাবে, মুসলিম দেশগুলোকেও নিজেদের মধ্যে এমন একটি সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে, যেখানে কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়াই একতার ভিত্তিতে পারস্পরিক সহযোগিতা বজায় থাকবে।
পাকিস্তান ও সৌদি আরবের মধ্যে এই প্রতিরক্ষা চুক্তি সকল দিক থেকেই প্রশংসনীয়। মুসলিম উম্মাহকে আরো বেশি ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং তাদের পবিত্র স্থানগুলোর সুরক্ষার জন্য আরও দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে। এই চুক্তি মুসলিম বিশ্বে আরও গভীর এবং কার্যকরী ঐক্যের বীজ বপন করবে বলে আমি মনে করি, যা বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে অত্যন্ত জরুরি।
উস্তাদ জাভেদ আহমেদ গামিদি
অনুবাদ: আল মানার ইনস্টিটিউট
Leave a Reply