কুরআন কি সমস্ত জ্ঞানের আধার?

admin Avatar

মুসলিমরা মনে করে পবিত্র কুরআন সমস্ত জ্ঞানের আধার, পৃথিবীর এমন কোনো জ্ঞান নেই যা কুরআনের মধ্যে পাওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে সূরা আনআমের ৩৮ নম্বর আয়াত দলিল হিসেবে পেশ করা হয়। সেখানে বলা হয়েছে, আমি এই গ্রন্থে কোনো কিছুই বাদ দিইনি। যাইহোক, এ ধারণা সঠিক নয় যে, কুরআনে পৃথিবীর সমস্ত জ্ঞান রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে কুরআনের কোনো আয়াতকে সঠিকভাবে বুঝতে হলে তার প্রসঙ্গ জানা অপরিহার্য।আর এই আয়াতের প্রসঙ্গ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এখানে অবিশ্বাসীদের একটি নির্দিষ্ট দাবির জবাব দেওয়া হয়েছে। অবিশ্বাসীরা প্রায়ই রাসুল (সা.)-কে বিদ্রূপ করে বলত, “আপনি যদি সত্যিই নবী হয়ে থাকেন, তবে আমাদের উপর সেই প্রতিশ্রুত শাস্তি নিয়ে আসুন।” তারা মূলত রাসুল (সা.)-এর নবুয়তের প্রমাণ হিসেবে অলৌকিক শাস্তি দেখতে চেয়েছিল।

এই দাবির জবাবে কুরআনে বলা হয়েছে, শাস্তির মতো অলৌকিক নিদর্শনের জন্য তাদের অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। সত্যকে উপলব্ধি করার জন্য তাদের চারপাশে এবং এই গ্রন্থে (কুরআনে) যথেষ্ট নিদর্শন রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, “আমি এই গ্রন্থে কোনো কিছুই বাদ দিইনি। অর্থাৎ রাসুল (সা.)-এর রিসালাতের সত্যতা প্রমাণের জন্য যে সমস্ত যুক্তি-প্রমাণ এবং নিদর্শন প্রয়োজন, তার সবকিছুই এই গ্রন্থে বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, এখানে কোনো কিছুই বাদ দেওয়া হয়নি।

সুতরাং এই আয়াতের মধ্যে আল্লাহ কখনোই এ কথা বলেননি যে, কুরআন পৃথিবীর সমস্ত জ্ঞানের আধার। আল্লাহ মানুষকে বিবেক, বুদ্ধি এবং জ্ঞান দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। মানুষ তার বুদ্ধি এবং গবেষণার মাধ্যমে জাগতিক জ্ঞান অর্জন করবে, এটাই আল্লাহর বিধান।

কুরআন সেইসব ক্ষেত্রে পথ দেখায় যেখানে মানুষের বুদ্ধি বা সাধারণ জ্ঞান পৌঁছাতে সক্ষম নয়। যেমন ইবাদতের পদ্ধতি, পরকালের জীবন এবং নৈতিকতার মানদণ্ড ইত্যাদি। কুরআন মূলত মানুষের সহজাত জ্ঞানের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে। কুরআনকে সকল জাগতিক জ্ঞানের আধার মনে করা ভুল। প্রকৃতপক্ষে কুরআন হলো হেদায়েত এবং জীবনবিধানের একটি পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ। কুরআন মানুষের আধ্যাত্মিক ও নৈতিক পথপ্রদর্শনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল যুক্তি ও নির্দেশনে পরিপূর্ণ। জাগতিক জ্ঞান অর্জনের জন্য মানুষকে তার স্রষ্টাপ্রদত্ত বুদ্ধি এবং বিচারক্ষমতা ব্যবহার করতে হবে।

ড. শেহজাদ সেলিম

অনুবাদ: আল মানার ইনস্টিটিউট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *