কিছু গোঁড়া জঙ্গি সংগঠন ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য বর্তমান গোটা বিশ্বে যে নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে তা ইসলামী প্রতিষ্ঠানসমূহে চর্চিত ও ইসলামবাদী রাজনৈতিক সংগঠনসমূহ কর্তৃক রাত দিন প্রচারিত ত্রুটিপূর্ণ আদর্শবাদের কুফল। ইসলামকে ভিত্তি করে মুসলিম সমাজে সৃষ্ট এ নৈরাজ্যের সংশোধন ধর্মবিবর্জিত (সেকুলারিজম) পন্থায় হবে না। বরং প্রচলিত ইসলামিক ন্যারেটিভের একটি কাউন্টার ন্যারেটিভ (প্রতিতত্ত্ব) উপস্থাপনের মধ্যেই এর সমাধান নিহিত রয়েছে। রাষ্ট্র ও তদসম্পর্কিত প্রচলিত ত্রুটিপূর্ণ ইসলামী তত্ত্বের বিপরীতে ইসলামের প্রকৃত তত্ত্ব এখানে উপস্থাপন করা হলো বিধায় আমরা একে কাউন্টার ন্যারেটিভ বা প্রতিতত্ত্ব বলছি।
১। ইসলাম ব্যক্তি কেন্দ্রিক। রাষ্ট্র কেন্দ্রিক নয়:
ইসলামের আবেদন মূলত: ব্যক্তিকেন্দ্রিক। ইসলাম মানুষের মন ও মননে রাজত্ব করতে চায়। ইসলামের সামাজিক নির্দেশনাও সামাজিক নেতৃত্ব তথা মুসলিম শাসক ব্যক্তিবর্গকে সম্বোধন করে দেয়া হয়েছে।
সুতরাং রাষ্ট্রেরও ধর্ম থাকতে হবে এবং সাংবিধানিক ভাবে একটি রাষ্ট্রকে ইসলামী রাষ্ট্র হিসেবে গঠন কিংবা ঘোষণা করতে হবে, এমন ধারণা ভিত্তহীন। এমন কোন নির্দেশ ইসলামে নাই।
যারা এমন ধারণা পেশ করেছেন এবং কোথাও কোথাও কিছুটা বাস্তবায়ন করতে সফল হয়েছেন, তারা মূলত: আধুনিক জাতি রাষ্ট্রের নাগরিকদের মাঝে স্থায়ী বিভাজনের ভিত তৈরি করেছেন।
এতে অমুসলিম নাগরিকগণ রাষ্ট্রের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে “প্রটেক্টেড মাইনরিটি” সুবিধা প্রাপ্ত হবেন। অথচ আধুনিক জাতি রাষ্ট্রে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল নাগরিক সমান।
২। “গ্লোবাল খিলাফাহ” ইসলাম নির্দেশিত নয়:
মুসলিম সংখ্যাগুরু রাষ্ট্রসমূহ একটি অভিন্ন শাসনের অধীনে ঐক্যবদ্ধ হবে এমন স্বপ্ন থাকতেই পারে। এর জন্য উপযুক্ত প্রচেষ্টাও চলতে পারে। ‘মুসলিম রাষ্ট্রপুঞ্জ’ ধারণা আরো উন্নত ও আরো বাস্তব হতে পারে। কিন্তু এ গ্লোবাল খিলাফাহ প্রতিষ্ঠা করা ইসলাম কর্তৃক নির্দেশিত কিংবা আরোপিত দায়িত্ব নয়, যা প্রতিষ্ঠা না করার কারণে মুসলমানগণ গুনাহগার হবে। যেরূপ বর্তমান কিছু মুসলিম মনে করে। অবশ্যই না, বৈশ্বিক ফিলাফাহ্ কোন ইসলামের পরিভাষা নয় এবং এটি প্রতিষ্ঠা করার জন্যেও কুরআন সুন্নাহ তথা ইসলামে কোন নির্দেশ নাই।
৩। জাতি রাষ্ট্রের ধারণা ইসলাম বিরোধী নয়:
ইসলামে জাতীয়তার ভিত্তি ইসলাম নয়। কুরআন সুন্নাহর কোথাও বলা নাই যে, মুসলমানদের এক জাতিতে পরিণত হতে হবে। বরং কুরআনে বলা হয়েছে-
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ
মুমিনরা পরস্পর ভাই-ভাই। (সূরা আল-হুজুরাত:১০)
সুতরাং মুসলমানদের পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তি জাতীয়তা নয়, বরং ভ্রাতৃত্ব। বিভিন্ন জাতি, দেশ ও রাষ্ট্রে বিভক্ত মুসলিমগণ পরস্পর ঈমানী ভাই। এ ভ্রাতৃত্বের ভিত্তিতে তাদের মাঝে পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠবে।
বিশ্বের মুসলমানগণকে তাদের ভিন্ন ভিন্ন জাতি রাষ্ট্র ও জাতীয়তা পরিত্যাগ করে এক জাতি ও এক রাষ্ট্রে পরিণত হতে হবে- এমন কোন নির্দেশ ইসলামে নাই। আর মুসলমানগণ ভিন্ন ভিন্ন জাতি রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে বসবাস করার ক্ষেত্রে কুরআন সুন্নাহয় নিষেধাজ্ঞাও নাই।
৪। মুসলিম উম্মাহর পরিধি ও তাকফীর:
নিজেদেরকে মুসলিম দাবিদার কোন জনগোষ্ঠীকে অমুসলিম কিংবা কুফ্ফার ঘোষণা করা যাবে না। যদিও তাদের কোন কোন আক্বীদা অথবা আমল এক বা একাধিক আলিম কিংবা বাকি অন্যান্য মুসলমানগণ কর্তৃক স্বীকৃত না হয়। বরং তাদের সেই আক্বীদা ও আমলকে ভুল, ভ্রান্ত এমনকি ইসলামভ্রষ্ট বলা গেলেও না।
কারণ, তারা তাদের মতবাদ কুরআন ও হাদিসের ভিত্তিতে (তাদের ধারণা অনুযায়ী) ব্যাখ্যা করে। সুতরাং তাদের দাবি অনুযায়ী তাদেরকে মুসলমানই বলতে হবে। এ পৃথিবীতে তাদের সাথে অন্যান্য মুসলমানগণের মতই আচরণ করতে হবে। এদের ভ্রান্ত আক্বীদা আমলের চূড়ান্ত হিসাব বিচার দিবসের জন্য আল্লাহর উপর ছেড়ে দিতে হবে।
তবে তাদের ভুল-ভ্রান্তি নির্দেশ করা, তাদের কুফরী ও শিরকী আক্বীদা সম্পর্কে তাদেরকে ও অন্যান্য মুসলমানদেরকে সতর্ক ও সজাগ করা, সত্য গ্রহণে তাদেরকে আহ্বান জানানোর অধিকার ও দায়িত্ব আলিমগণের রয়েছে। কিন্তু তাদেরকে ইসলাম থেকে খারিজ করে কুফ্ফার ঘোষণার অধিকার কারো নাই। এ অধিকার আল্লাহ্ কাউকে দেন নাই।
৫। শিরক কুফর ইরতিদাদের শাস্তি:
শিরক, কুফর ও ইরতিদাদ (ইসলাম ত্যাগ) মূলত: জঘন্যতম অপরাধ। কিন্তু কোন মানুষ অন্য মানুষকে এসব অপরাধের জন্য শাস্তি দিতে পারে না। এ অধিকার একমাত্র আল্লাহর। পরকালে তো অবশ্যই, ইহকালেও (তাঁর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী) এসব অপরাধের শাস্তি একমাত্র তিনিই প্রদান করেন।
পরকালীন শাস্তি এখানে আলোচ্য নয়। দুনিয়ায় এসব অপরাধের খোদায়ী শাস্তির ধরণ নিম্নরূপ:
আল্লাহ্ কোন জাতির প্রতি রাসূল পাঠানোর পর রাসূল তাদের কাছে “ইতমামুল হুজ্জাত” তথা চূড়ান্ত প্রমাণ উপস্থাপন করেন। এরপর রাসূলের দাওয়াত অস্বীকার করার কোন অজুহাত থাকে না। তারপরও যদি সে জাতি শিরক, কুফর ও ইরতিদাদের মতো জঘন্য অপরাধে অটল থাকে তখন আল্লাহ্ তাদেরকে এই দুনিয়াতেই শাস্তি প্রদান করেন। এ শাস্তি আসমানী গজবও হতে পারে, যা নবী রাসূল ও তাদের জাতিসমূহের ইতিহাস। আবার নবী রাসূল ও তাদের সমকালীন সহযোগী সহাবিদের হাতে কাফিরদের পরাজয় ও ধ্বংসের মাধ্যমেও এ শাস্তি কার্যকর হতে পারে, যা মুহাম্মদ স. ও সাহাবীগণের ইতিহাস। এটি আল্লাহ্ তাআলার প্রতিষ্ঠিত সুন্নাহ।
وَلِكُلِّ أُمَّةٍ رَسُولٌ ۖ فَإِذَا جَاءَ رَسُولُهُمْ قُضِيَ بَيْنَهُمْ بِالْقِسْطِ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ -سورة يونس, آية ٤٧
“আর প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য একেকজন রসূল। যখন তাদের কাছে তাদের রসূল আনগমন করেন তাদের মাঝে নায্য ফয়সালা হয়ে যায়। তাদের উপর জুলুম করা হয় না।”
রিসালাত ও ওহির দরজা স্থায়ী রুদ্ধ হওয়ার পর ঐসব অপরাধের পার্থিব শাস্তি প্রদানের অধিকার ও দায়িত্ব কোন মানুষের উপর বর্তানোর কোন সুযোগ নেই।
৬। জিহাদ : সন্ত্রাস ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে ইসলাম নির্দেশিত প্রতিরোধ সংগ্রাম:
নিঃসন্দেহে ‘জিহাদ’ ইসলাম নির্দেশিত। ইসলাম অন্যায়-অবিচার, জুলুম ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মুসলমানদেরকে জিহাদের নির্দেশ দেয়। এ নির্দেশ অবশ্যই সামর্থ্য সাপেক্ষ। লক্ষণীয় যে, সন্ত্রাস ও নিপীড়নের মুখে জনগণকে ধর্ম ত্যাগে বাধ্য করার বিরুদ্ধে জিহাদের প্রাথমিক নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।
أُذِنَ لِلَّذِينَ يُقَاتَلُونَ بِأَنَّهُمْ ظُلِمُوا ۚ وَإِنَّ اللَّهَ عَلَىٰ نَصْرِهِمْ لَقَدِيرٌ * الَّذِينَ أُخْرِجُوا مِنْ دِيَارِهِمْ بِغَيْرِ حَقٍّ إِلَّا أَنْ يَقُولُوا رَبُّنَا اللَّهُ ۗ وَلَوْلَا دَفْعُ اللَّهِ النَّاسَ بَعْضَهُمْ بِبَعْضٍ لَهُدِّمَتْ صَوَامِعُ وَبِيَعٌ وَصَلَوَاتٌ وَمَسَاجِدُ يُذْكَرُ فِيهَا اسْمُ اللَّهِ كَثِيرًا ۗ وَلَيَنْصُرَنَّ اللَّهُ مَنْ يَنْصُرُهُ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَقَوِيٌّ عَزِيز – سورة الحج, آية ٣٩-٤٠
“যুদ্ধের অনুমতি দেয়া হল তাদেরকে যাদের সাথে কাফেররা যুদ্ধ করে; কারণ তাদের প্রতি অত্যাচার করা হয়েছে। আল্লাহ তাদেরকে সাহায্য করতে অবশ্যই সক্ষম।
যাদেরকে তাদের ঘর-বাড়ী থেকে অন্যায়ভাবে বহিস্কার করা হয়েছে শুধু এই অপরাধে যে, তারা বলে আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ। আল্লাহ যদি মানবজাতির একদলকে অপর দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তবে (খ্রীষ্টানদের) গির্জা, এবাদত খানা, (ইহুদীদের) উপাসনালয় এবং মসজিদসমূহ বিধ্বস্ত হয়ে যেত, যেগুলাতে আল্লাহর নাম অধিক স্মরণ করা হয়। আল্লাহ নিশ্চয়ই তাদেরকে সাহায্য করবেন, যারা আল্লাহর সাহায্য করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী শক্তিধর।”
কুরআনের জিহাদ সংশ্লিষ্ট আয়াতসমূহ মুসলমানদেরকে সামষ্টিক ভাবে সম্বোধন পূর্বক নির্দেশনা প্রদান করে, ব্যক্তিক নয়। তাই ইসলাম জিহাদের মত সশস্ত্র ও আক্রমণাত্মক কর্মযজ্ঞ পরিচালনার নির্দেশ কেবলমাত্র মুসলমানদের প্রতিষ্ঠিত কর্তৃপক্ষকেই (তথা মুসলমানদের শাসককে) প্রদান করে। কোন ব্যক্তি কিংবা দলকে জিহাদ পরিচালনার অনুমতি ইসলাম দেয় না। আল্লাহর রাসূল স. বলেন,
وإنما الإمام جنة يقاتل من ورائه ويتقى به فإن أمر بتقوى الله وعدل فإن له بذلك أجرا وإن قال بغيره فإن عليه منه
ইমাম (মুসলমানদের শাসক) তো ঢাল স্বরূপ। তাঁর নেতৃত্বে যুদ্ধ পরিচালিত হবে এবং তাঁরই মাধ্যমে নিরাপত্তা অর্জন করা হয়। অতঃপর যদি সে আল্লাহ্র তাকওয়ার নির্দেশ দেয় এবং সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে, তবে তার জন্য পুরষ্কার রয়েছে আর যদি সে এর বিপরীত করে তবে এর মন্দ পরিণাম তার উপরই বর্তাবে। (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ২৯৫৭)
সুতরাং জিহাদ হল অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে সামর্থ্যবান মুসলিম কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পরিচালিত সুসংহত ও সুসংগঠিত ন্যায্য প্রতিরোধ সংগ্রাম। মুসলমান কোন ব্যক্তি কিংবা গ্রুপ কর্তৃক পরিচালিত বিচ্ছিন্ন আক্রমণাত্মক কিংবা সশস্ত্র কর্মকাণ্ড ইসলাম নির্দেশিত জিহাদ নয়।
৭। জিহাদে নৈতিক বাধ্যবাধকতা:
ইসলামের জিহাদ হল আল্লাহর পথে সংগ্রাম। অতএব নৈতিক বিধিনিষেধ ও মানবিক মূল্যবোধের ব্যত্যয় ঘটিয়ে এ সংগ্রাম পরিচালিত হতে পারে না। যুদ্ধাবস্থা কিংবা সশস্ত্র আক্রমণ, যে কোন পরিস্থিতিতে নৈতিকতা ও মানবিকতা প্রাধান্য পাবে। জিহাদের ময়দানেও আল্লাহ্ মুসলমানদের জন্য নীতি নৈতিকতা বিসর্জন দেয়া বৈধ করেন নাই। এ কারণে জিহাদ কেবলমাত্র প্রতিপক্ষ যোদ্ধাদের বিরুদ্ধেই পরিচালিত হবে। যুদ্ধ চলাকালীন প্রতিপক্ষের বেসামরিক নাগরিকদের উপর আক্রমণ করা ইসলামে নিষেধ করা হয়েছে। এমন কি রাসূলুল্লাহ স. যুদ্ধের ময়দানে নারী ও শিশুদের হত্যা করতে নিষেধ করেছেন।
عن ابن عمر رضي الله عنه قال وجدت امرأة مقتولة في بعض مغازي رسول الله صلى الله عليه وسلم فنهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن قتل النساء والصبيان
ইব্নু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল স.-এর কোন এক যুদ্ধে জনৈকা মহিলাকে নিহত অবস্থায় পাওয়া যায়। তখন আল্লাহর রসূল স. মহিলা ও শিশুদের হত্যা করতে নিষেধ করেন। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩০১৫)
এ নিষেধাজ্ঞার কারণ হল, যুদ্ধক্ষেত্রে নারী ও শিশুদের উপস্থিতি সশস্ত্র যোদ্ধা হিসেবে ছিল না। তারা সেবা ও মৌখিক অনুপ্রেরণা প্রদানকারী ছিল। এ অপরাধের কারণে তাদের হত্যা করা বৈধ হতে পারে না।
ইসলামের আইন হল, মৌখিক আক্রমণের প্রতিউত্তর মৌখিক হবে। প্রতিপক্ষ অস্ত্র তুলে নিলেই কেবল তাদের উপর আক্রমণ করা যাবে। যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ অস্ত্র পরিত্যাগ পূর্বক আত্মসমর্পণ করলে তাদের হত্যা করা যাবে না, বন্দি করা যাবে মাত্র।
মহান আল্লাহ বলেন,
وَقَاتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ الَّذِينَ يُقَاتِلُونَكُمْ وَلَا تَعْتَدُوا ۚ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ – سورة البقرة, آية ١٩٠
“আর লড়াই কর আল্লাহর ওয়াস্তে তাদের সাথে, যারা লড়াই করে তোমাদের সাথে। অবশ্য কারো প্রতি বাড়াবাড়ি করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন না।”
৮। গণতন্ত্রই একমাত্র বৈধ রাষ্ট্রনীতি:
আধুনিক যুগের পশ্চিমা চিন্তকগণের বহু শতাব্দী আগেই ইসলাম রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার ক্ষেত্রে পারস্পরিক মতামত ও পরামর্শকেই ভিত নির্ধারণ করে। কুরআন বলে,
وَأَمْرُهُمْ شُورَىٰ بَيْنَهُمْ -سورة الشورى, آية ٣٨
অর্থাৎ মুসলমানদের সামষ্টিক বিষয়াদি তাদের পারস্পরিক পরামর্শ ও মতামতের ভিত্তিতে সম্পন্ন হবে।
মুসলমানদের আদর্শ রাষ্ট্র ব্যবস্থা “খেলাফতে রাশেদা” মুসলমানদের পারস্পরিক মতামত ও পরামর্শের ভিত্তিতেই প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত ছিল। জনগণের “মতামত ও পরামর্শ” ব্যতীত প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত কোন রাজতান্ত্রিক, স্বৈরতান্ত্রিক, সামরিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও সরকার ইসলামে স্বীকৃত নয়। বরং এ ধরণের সরকার অবৈধ বিবেচিত, সরকার প্রধানের কপালে সিজদার দাগ থাকুক কিংবা আমিরুল মুমিনীন উপাধি ধারণ করুক।
এটাই গণতন্ত্র। আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি তথা সংসদ সদস্যদের সর্বসম্মতি অথবা অধিকাংশের মতামতের ভিত্তিতে আইন কানুন প্রণীত হবে। এ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যতীত সরকার প্রধান কিংবা কোন জাতীয় সংস্থার মতামত রাষ্ট্রীয় আইনের মর্যাদা পাবে না। এমন কি রাষ্ট্র সংশ্লিষ্ট ইসলামের আইন-কানুনসমূহ শুধুমাত্র আলিম ফকীহগণের মতের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় আইনে পরিণত হবে না। বরং তাদের ব্যাখ্যা ও মতামত সংসদে পাশ হওয়ার পরই জনগণের অনুসরণ যোগ্য রাষ্ট্রীয় আইনের মর্যাদা পাবে।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় গঠিত সংসদই রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ। অন্য কোন সংস্থা , এমন কি আদালত, কোন বিশেষজ্ঞ পণ্ডিত বা ধর্মীয় আলিম প্রজাতন্ত্রের সংসদের চেয়ে অধিকতর আইনি মর্যাদা সম্পন্ন হবে না। বরং প্রজাতন্ত্রের সকলেই গণতান্ত্রিক সংসদের আনুগত্য করতে আইনগত বাধ্যবাধকতার অধীন।
তবে সংসদের সমালোচনা ও সংসদে গৃহীত সিদ্ধান্ত ও আইনের ত্রুটি-বিচ্যুতি নির্দেশ করার অধিকার ও দায়িত্ব জনগণ ও বিশেষজ্ঞগণের রয়েছে। কিন্তু গণতান্ত্রিক সংসদ ও প্রজাতান্ত্রিক সরকারের আইন অমান্য করা কিংবা বিদ্রোহ করার অধিকার কারো নাই।
اَمْرُهمْ شُوْرٰی بَیْنَہُمْ
এই মূলনীতি মতবিরোধ সত্ত্বেও সংসদের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে রাষ্ট্রের সকল ব্যক্তি, দল ও সংস্থাকে বাধ্য করে।
৯। রাষ্ট্রে ইসলামী শরীয়ত বাস্তবায়নে সরকারের দায়িত্ব ও পরিসীমা:
সাধারণতঃ মুসলিম প্রধান রাষ্ট্রে সরকারের নিকট রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলামী শরীয়ত কায়েমের দাবি উত্থাপন করা হতে থাকে। এ ধরণের দাবি বিভ্রান্তিকর। কারণ, এতে ধারণা হয় যে, ইসলাম যেন সরকারকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বলে জনগণের উপর শরীয়তের তাবৎ বিধিবিধান চাপিয়ে দেয়ার অধিকার দিয়ে দিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে কুরআন সুন্নাহ অনুযায়ী এমন অধিকার কোন সরকারের নাই।
ইসলামী শরীয়তে দু’ধরণের বিধিবিধান রয়েছে। এক. ব্যক্তিগত, যা একজন ব্যক্তিকে প্রদান করা হয়েছে।
দুই. সামষ্টিক, যা মুসলিম সমাজ বা রাষ্ট্র সংশ্লিষ্ট।
ব্যক্তিগত বিধিবিধান সম্পর্কিত আলোচনা:
প্রথম প্রকারের বিধিবিধান আল্লাহ ও বান্দাহর মাঝে সীমাবদ্ধ। এসব বিষয়ে ব্যক্তিকে আল্লাহর কাছেই জবাবদিহি করতে হবে, কোন সরকারের কাছে নয়। অতএব, দুনিয়ার কোন রাষ্ট্র কিংবা সরকার এসব বিধিবিধান প্রতিপালনে ব্যক্তিকে বাধ্য করতে পারে না। যেমন রোজা রাখতে, হাজ্ব বা ওমরায় যেতে, খাতনা করাতে, গোঁফ ছোট রাখতে, নারীদের বক্ষে ওড়না পরিধান করতে, নারীদের প্রসাধনী ও অলংকার প্রকাশ না করতে কিংবা বাইরে বের হওয়ার সময় স্কার্ফ পরিধান করতে সরকার কাউকে বাধ্য করতে পারে না। এ সমস্ত ব্যাপারে শিক্ষা-দীক্ষা ও উপদেশ-পরামর্শের ব্যবস্থা গ্রহণ ভিন্ন অন্য কোন ধরণের পদক্ষেপ নেয়ার কোন অধিকার সরকারের নাই। তবে এক্ষেত্রে কারো অধিকার হরণ কিংবা কারো জান-মাল ও ইজ্জত-আব্রু বিনাশের আশংকা দেখা দিলে ভিন্ন কথা।
কুরআন অত্যন্ত সুস্পষ্ট ভাষায় বলে, ইসলামের ইতিবাচক নির্দেশাবলির মধ্যে শুধুমাত্র সালাত ও যাকাত আদায়ের জন্য মুসলমানদের কোন সরকার চাইলে আইনগতভাবে মুসলমানদেরকে বাধ্য করতে পারবে। এছাড়া ইসলামের আর কোন ইতিবাচক নির্দেশনার বিষয়ে কোনরূপ আইনি বাধ্যবাধকতা আরোপ করা যাবে না। বরং রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আল্লাহর নির্দেশ হল, সালাত ও যাকাতের পর মুসলমানদেরকে নিজেদের এখতিয়ারে ছেড়ে দিতে হবে। অন্য কোন (ইতিবাচক) দ্বীনি নির্দেশ প্রতিপালনে বাধ্য করা যাবে না।
فَإِنْ تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ فَخَلُّوا سَبِيلَهُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيم -سورة التوبة, آية ٥
“কিন্তু যদি তারা ফিরে আসে, নামায কায়েম করে, যাকাত আদায় করে, তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”
রাষ্ট্র সংশ্লিষ্ট বিধিবিধান সম্পর্কিত আলোচনা:
এই দ্বিতীয় প্রকারের নির্দেশনাসমূহ মুসলমানদের সরকারকেই প্রদান করা হয়েছে। যেহেতু এ সরকার মুসলমানদের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ। আলিমগণ কর্তৃক সরকারের নিকট এ প্রকারের নির্দেশনাসমূহ বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো যথাযথ ও যৌক্তিক। বরং তাদের উপর দায়িত্বও বটে। তবে ইহা সংশ্লিষ্ট শরঈ বিধানের উপর আমল করার ‘দাওয়াত’। ‘ইসলামী শরীয়ত কায়েমের দাবি’ এক্ষেত্রে উপযুক্ত পরিভাষা নয়।
দ্বিতীয় প্রকারের নির্দেশনাসমূহ:
ক. মুসলমানগণ স্বীয় শাসকদের রায়ত বা প্রজা নয়, বরং সমমর্যাদা সম্পন্ন নাগরিক। রাষ্ট্রীয় ও আইনগত ভাবে মুসলমানদের মাঝে কোনরূপ পার্থক্য করা যাবে না। তাদের জান-মাল ও ইজ্জত-আব্রু সংরক্ষিত থাকবে। এমন কি রাষ্ট্র তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাকাত ছাড়া কোন প্রকার টেক্স আরোপ করতে পারবে না। মুসলমানদের বিশেষ সামষ্টিক সম্পদ তাদের জন্যেই ব্যবহৃত হবে।রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে এ সম্পদের সংরক্ষণ ও উন্নয়ন চলমান থাকবে। রাষ্ট্র এ সম্পদের আয় থেকে দরিদ্র নাগরিকদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। তাদের ব্যক্তিগত বিষয়াবলি যেমন বিবাহ, তালাক, মীরাস, পারস্পরিক লেনদেন কিংবা এরূপ কোন বিষয়ে পারস্পরিক দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হলে রাষ্ট্র ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী মীমাংসার ব্যবস্থা করবে। মুসলমানদের দৈনন্দিন সালাত, রমজানের রোজা, হাজ্ব ও ওমরাহ প্রতিপালনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থাপনা রাষ্ট্র আয়োজন করবে। ন্যায় ইনসাফ এবং (أمرهم شورى بينهم) পারস্পরিক মতামত ও পরামর্শের ভিত্তিতে শাসন ব্যবস্থা পরিচালিত হবে।
]
খ. জুমার নামাজ ও দুই ঈদের নামাজের আয়োজন সরকারের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হবে। কেবল সরকার কর্তৃক নির্দেশিত কিংবা নির্ধারিত ও অনুমোদিত স্থানেই কেবল এই নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। জুমা আর ঈদের খুতবার মিম্বর ও ইমামতি সরকারের জন্যই নির্ধারিত থাকবে। রাষ্ট্র প্রধান কিংবা তাঁর নির্দেশিত ব্যক্তিগণই খুতবা প্রদান করবেন ও ইমামতি করবেন। রাষ্ট্রের সীমার মধ্যে কোন ব্যক্তি বা দল বিচ্ছিন্ন ভাবে জুমা ও ঈদের নামাজের আয়োজন করতে পারবে না।
গ. রাষ্ট্রীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হবে মূলত ‘সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ’ তথা ‘আমর বিল মা’রুফ ও নাহী আনিল মুনকার’-এর দায়িত্ব পালনকারী বিভাগ। সুতরাং সমাজের সবচেয়ে সৎ ও যোগ্য লোকদেরকে এ বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হবে। এরা জনগণকে সৎ ও ভালো কাজে আদেশ, উপদেশ, উৎসাহ ও পরামর্শ প্রদান করবে আর অসৎ ও মন্দ কাজে বাঁধা দেবে। এ বিভাগ শুধুমাত্র তখনি আইন প্রয়োগ করবে যখন কোন ব্যক্তি অন্য কারো অধিকার হরণে উদ্যত হবে অথবা কারো জান-মাল ও ইজ্জত-আব্রুর বিরুদ্ধে হুমকি কিংবা পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
ঘ. সরকার নিজ শত্রুদের ক্ষেত্রেও ন্যায়ের উপর অটল থাকবে, সত্য উচ্চারণ করবে, সত্য সাক্ষ্য দেবে আর ন্যায় ইনসাফ থেকে বিচ্যুত হয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করবে না।
ঙ. সরকার কর্তৃক দেশের আভ্যন্তরীণ কিংবা বৈদেশিক যে কোনো চুক্তি সম্পাদিত হলে চুক্তির মেয়াদ ও শর্ত অবশিষ্ট থাকা কালীন পূর্ণ আন্তরিকতা ও বিশ্বস্ততার সাথে চুক্তি রক্ষা ও প্রতিপালন করতে হবে।
চ) হত্যা এবং ‘ফাসাদ ফিল আরদ’ (তথা সন্ত্রাস, গোলযোগ, রাষ্ট্র ও আইনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ মূলক অপরাধ) ব্যতীত অন্য কোন অপরাধের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা যাবে না। রাষ্ট্রের কোন নাগরিক যিনা, চুরি, হত্যা, ফাসাদ ফিল আরদ এবং কযফ তথা ব্যাভিচারের অপবাদ প্রদানের অপরাধে লিপ্ত হয় আর আদালতের কাছে সাক্ষ্য-প্রমাণ ও বিচারিক প্রক্রিয়ায় প্রতীয়মান হয় যে, অপরাধী ব্যক্তিগত, বংশীয় কিংবা সামাজিক (যেমন মস্তিষ্ক বিকৃতি, দারিদ্র্য ইত্যাদি) কোন কারণেই দণ্ডমুক্তির উপযুক্ত নয়, তবে অপরাধীর উপর ঐ অপরাধসমূহের ক্ষেত্রে মহান আল্লাহ্ কর্তৃক নির্ধারিত পবিত্র কুরআনে বর্ণিত শাস্তি বা দণ্ডসমূহ বাস্তবায়নের জন্য রাষ্ট্রই আইনি ও বিচারিক ব্যবস্থাপনা করবে।
ছ. পৃথিবীর আনাচে কানাচে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছানোর লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ব্যবস্থা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। দুনিয়ার কোন শক্তি এ কাজে বাঁধার সৃষ্টি করলে কিংবা ইসলাম গ্রহণকারীদের উপর চাপ বা কঠোরতা আরোপ করলে, মুসলিম রাষ্ট্র ও সরকার এ ধরণের অন্যায্য কঠোরতা ও প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সম্ভাব্য সকল প্রচেষ্টা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এমনকি প্রয়োজনে এ ধরণের জুলুমের বিরুদ্ধে সশস্ত্র জিহাদ পরিচালনা করবে।
১০। রাষ্ট্রে শরয়ী আইন বাস্তবায়নে আলিম ও সংস্কারকগণের দায়িত্ব ও পরিধি:
মুসলিম রাষ্ট্র ও সরকার সংশ্লিষ্ট নির্দেশনাসমূহ এত বেশি গুরুত্ব ও সতর্কীকরণের সাথে দেয়া হয়েছে যে, শাসকগণ আল্লাহর কিতাবকে মেনে নেওয়ার পরও আল্লাহর অবতারিত আইন ও বিধি অনুসারে ফয়সালা না করলে কিয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে তারা জালিম, ফাসিক ও কাফির সাব্যস্ত হবে বলে আল কুরআন ঘোষণা করেছে।
(وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ)
(وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ)
(وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ)
[سورة المائدة-٤٤،٤٥،٤٧]
এরপরও যদি মুসলমানদের সরকার এই ব্যাপারে অনীহা কিংবা বিরুদ্ধতা অবলম্বন করে, তবে মুসলমানদের আলিম ও কল্যাণকামী ব্যক্তিবর্গের দায়িত্ব ও কর্তব্য হল, রাষ্ট্র সংশ্লিষ্ট শরীয়তের নির্দেশনা বাস্তবায়ন না করার পার্থিব ও পারলৌকিক ক্ষতি ও পরিণাম সম্পর্কে তাঁরা সরকারকে সতর্ক করবে, প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার সাথে (حكمة) এবং (موعظة حسنة) উত্তম উপদেশমূলক পন্থায় সঠিক পথ অবলম্বন করার জন্য শাসকবর্গকে আহ্বান জানাবে, ইসলামের রাষ্ট্রনৈতিক আইন সম্পর্কে তাদের জিজ্ঞাসার সন্তোষজনক উত্তর প্রদান করবে, এ বিষয়ে তাদের সন্দেহ-সংশয় ও ওজর-আপত্তি দূরীভূত করবে।
আলিমগণ সরকারের কাছে দলীল-প্রমাণ সহকারে সুস্পষ্ট করবে যে, মহান আল্লাহ্ কেন শরীয়ত প্রদান করেছেন? মানুষের সমাজ জীবনের সাথে ইসলামী শরীয়তের কি সম্পর্ক? ইসলামী শরীয়তে বিধিবিধানের ভিত্তি কি? আধুনিক যুগের মানুষ ইহা অনুধাবনে কেন জটিলতা অনুভব করে?
ইসলামী শরীয়ত বর্ণনা ও বোঝানোর জন্য এমন ধরণ ও পন্থা অবলম্বন করতে হবে, যাতে শরীয়তের হিকমত (নিগূঢ় তত্ত্ব) আর মাকাসিদ (লক্ষ্য-উদ্দেশ্য) শাসকগণের কাছে সুস্পষ্ট হয়ে যায় এবং যাতে পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে ইসলামী শরীয়ত গ্রহণ করতে ও তা বাস্তবায়ন করতে তাদের মন-মগজ প্রস্তুত হয়ে যায়।
ইসলামে আলিম-ওলামা ও কল্যাণকামী ব্যক্তিবর্গের দায়-দায়িত্বের পরিধিই হল ইসলামের প্রতি আহ্বান, শিক্ষা দীক্ষা (দাওয়াত, তালীম, তরবিয়ত) ও সতর্কীকরণ (إنذار)। এছাড়া তাদেরকে উম্মাহ ও উম্মাহর শাসকবর্গের জন্য দারোগা বানানো হয়নি এবং তাদেরকে এ দায়িত্বও দেয়া হয়নি যে, নিজেদের অনুসারী আর সমর্থকদের সংগঠিত করে বন্দুকের নলের মুখে মুসলমানদেরকে ও তাদের শাসকবর্গকে শরীয়তের অনুসরণ করতে বাধ্য করবে।
মূল: জাভেদ আহমেদ গামিদি
সার-সংক্ষেপ অনুবাদ: অধ্যাপক মুনির উদ্দীন
Leave a Reply