কুরবানির উদ্দেশ্য আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। পশু কুরবানির মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে প্রতীকীভাবে এটা প্রমাণ করি যে, আমরা আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করেছি। আমরা নিজেদের প্রাণের বিনিময়ে পশু কুরবানি করার মাধ্যমে প্রতীকীভাবে এই কথার জানান দিই যে, আমরা আল্লাহর জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করতে সর্বদা প্রস্তুত। কুরবানির মাধ্যমে আমরা আল্লাহর প্রতি যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি, তার মহান উদাহরণ হযরত ইবরাহিম (আ.) বহু আগেই পৃথিবীর মানুষের সামনে উপস্থাপন করেছেন। কুরবানি সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে:
لَن يَنَالَ اللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلَٰكِن يَنَالُهُ التَّقْوَىٰ مِنكُمْ ۚ كَذَٰلِكَ
سَخَّرَهَا لَكُمْ لِتُكَبِّرُوا اللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَاكُمْ ۗ وَبَشِّرِ الْمُحْسِنِينَ
“আল্লাহর কাছে না এগুলোর মাংস পৌঁছায়, না এগুলোর রক্ত। বস্তুত তাঁর কাছে কেবল তোমাদের তাকওয়া পৌঁছায়। এভাবেই আল্লাহ এগুলোকে তোমাদের জন্য বশীভূত করেছেন যেন আল্লাহ তোমাদেরকে যে হেদায়েত দিয়েছেন, তার জন্য তোমরা আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করো। (এটা তাদের পথ, যারা উত্তম পন্থা অবলম্বন করে) আর (হে নবী), আপনি উত্তম পন্থা অবলম্বনকারীদের সুসংবাদ দেন।” (সুরা হজ্জ, ৩৭)
কুরবানির বিধি-বিধান
মুসলমানদের ইজমা ও তাওয়াতুরের মাধ্যমে কুরবানির যে বিধি-বিধান আমাদের কাছে পৌঁছেছে, তা নিম্নরূপ:
কুরবানি করতে হবে গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তু দিয়ে। যে প্রাণীকে কুরবানি করা হবে, সেই প্রাণী অবশ্যই শারীরিক ত্রুটিমুক্ত হবে। ঈদুল আজহা উপলক্ষে ১০ই জিলহজ ঈদের নামাজ আদায়ের পর পশু কুরবানি করতে হবে। সুরা হজ্জের ২৬ নম্বর আয়াতে এই বিষয়কে “أَيَّامٍ مَّعْلُوْمَاتٍ” (জ্ঞাত দিনসমূহ) হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। পারিভাষিক অর্থে এ দিনগুলোকে ‘আইয়ামে তাশরিক’ (তাশরিকের দিনসমূহ) বলা হয়। কুরবানির পাশাপাশি এই দিনগুলোতে আরও একটি সুন্নাত প্রচলিত রয়েছে এবং সেটি হচ্ছে: প্রত্যেক নামাজের জামাতের পর তাকবির ধ্বনি উচ্চারণ করা। নামাজের পর তাকবির বলার এই বিধান সাধারণভাবে দেয়া হয়েছে। শরীয়তে এর জন্য নির্দিষ্ট কোনো বাক্য বা শব্দ বাধ্যতামূলক করা হয়নি। কুরবানির গোশত মানুষ নিজেরাও কোনো দ্বিধা ছাড়াই খেতে পারে এবং অন্যদেরকেও খাওয়াতে পারে। কুরআন এই বিষয়ে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে:
فَإِذَا وَجَبَتْ جُنُوبُهَا فَكُلُوا مِنْهَا وَأَطْعِمُوا الْقَانِعَ وَالْمُعْتَرَّ ۚ
“(কুরবানি করার পর) যখন এগুলো কাত হয়ে পড়ে যাবে, তখন এগুলো থেকে তোমরা আহার করো, আর অল্পতে তুষ্ট দরিদ্র ও না পেরে যাঁচতে আসা দরিদ্রকেও আহার করাও।” (সুরা হজ্জ, ৩৬)
এগুলোই কুরবানির বিধি-বিধান। এছাড়াও রাসুল (সা.) কুরবানি সম্পর্কে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন, তা নিচে তা তুলে ধরা হলো:
- যারা কুরবানি করবেন, তাদের জন্য কুরবানির আগে নখ ও চুল কাটা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। [সহিহ মুসলিম: ৫১২১]
- কুরবানি অবশ্যই ঈদের নামাজের পরে করতে হবে। যদি ঈদের নামাজের আগে কুরবানি করা হয়, তবে সেটা সাধারণ পশু জবাই হিসেবে বিবেচিত হবে। [সহিহ বুখারি: ৫৫৬০–৫৫৬২, সহিহ মুসলিম: ৫০৬৪, ৫০৬৯, ৫০৭৯]
- উপযুক্ত বয়সের পশু দ্বারা কুরবানি করতে হবে। এক্ষেত্রে ছাগলের বয়স এক বছর, গরু বা ষাঁড় কমপক্ষে দুই বছর এবং উট কমপক্ষে পাঁচ বছরের হতে হবে। যদি উপযুক্ত বয়সের পশু না পাওয়া যায়, তবে এর থেকে কম বয়সের পশু কুরবানি করা যেতে পারে। [সহিহ মুসলিম: ৫০৮২, আবু দাউদ: ২৭৯৯, নাসায়ি: ৪৩৮৩]
- গরু, ষাঁড় বা উট কুরবানির ক্ষেত্রে একাধিক ব্যক্তি অংশগ্রহণ করতে পারবে। এমনকি সাতজন পর্যন্ত অংশগ্রহণ করলেও কোনো আপত্তি নেই। [সহিহ মুসলিম: ৩১৮৬] হাদিসে এসেছে, একটি উটের কুরবানিতে স্বয়ং রাসুল (সা.)-এর উপস্থিতিতে দশজন ব্যক্তি শরিক হয়েছিল এবং রাসুল (সা.) তাদেরকে নিষেধ করেননি । [তিরমিজি: ১৫০১, নাসায়ি: ৪৩৯৭–৪৩৯৮]
- নফল ইবাদত হিসেবে ঈদুল আজহার বাইরে অন্য সময়েও কুরবানি করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কোনো শিশুর জন্ম হলে রাসুল (সা.) নিজেও কুরবানি করেছেন এবং অন্যদেরও উৎসাহিত করেছেন। [সহিহ বুখারি: ৫৪৭২, আবু দাউদ: ২৮৪১]
লেখক: জাভেদ আহমেদ গামিদি
অনুবাদ: আল মানার ইনস্টিটিউট
Leave a Reply