কুরআনে বর্ণিত উত্তরাধিকার বণ্টনের আইনে বারবার জোর দেওয়া হয়েছে যে, এই বণ্টন মৃত ব্যক্তির উইল সম্পাদনের পর হবে। এ নিয়ে দুটি প্রশ্ন ওঠে:
১. উইলের জন্য কোনো সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে কি না? অর্থাৎ, একজন ব্যক্তি যত খুশি উইল করতে পারে কি না?
২. উইল কি তাদের জন্যও করা যাবে যাদের আল্লাহ তায়ালা মৃতের ওয়ারিশ হিসেবে নির্ধারণ করেছেন?
প্রথম প্রশ্নের উত্তর:
কুরআনের ভাষায় এ বিষয়ে কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। আল্লাহ তায়ালা পরিষ্কারভাবে বলেছেন যে, উত্তরাধিকার বণ্টন মৃতের উইল পূরণের পর করা হবে। ভাষা ও ব্যাকরণের নিয়ম অনুযায়ী, এই সাধারণ নির্দেশে কোনো সীমা আরোপ করা যায় না।
এ বিষয়ে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে, যার প্রসঙ্গ সম্পূর্ণ ভিন্ন। এক সাহাবি নবী (স.)-এর সামনে তার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন যে, তিনি তার সমস্ত সম্পদ আল্লাহর পথে দান করে যেতে চান। নবী (স.) বললেন, “এটা বেশি হয়ে যাবে। কারো কাছে সম্পদ থাকলে তাকে তার ওয়ারিসদের দরিদ্র রেখে যাওয়া উচিত নয়।” সাহাবি জিজ্ঞাসা করলেন, দুই-তৃতীয়াংশ বা অর্ধেক দান করলে কেমন হবে? নবী (স.) একই উত্তর দিলেন। শেষে সাহাবি এক-তৃতীয়াংশ দানের কথা বললে নবী (স.) বললেন, “এটাই অনেক।” (সহিহ বুখারি, হাদীস নং ২৭৪২; সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ১৬২৮)
বোঝাই যায়, এটি এক বিশেষ পরিস্থিতিতে এক বিশেষ ব্যক্তির সিদ্ধান্তের প্রতি নবী (স.)-এর মন্তব্য। এর সাথে আইনগত সীমাবদ্ধতার কোনো সম্পর্ক নেই।
দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর হলো, ওয়ারিশদের জন্য স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা ওসিয়ত করে দিয়েছেন। আল্লাহর ওসিয়তের বিপরীতে কোনো মুসলমান নিজের ওসিয়ত পেশ করার দুঃসাহস দেখাতে পারে না। সুতরাং এ কথা একেবারে স্পষ্ট যে, তাদের জন্য আত্মীয়তার ভিত্তিতে কোনো ওসিয়ত করা যাবে না। তবে যদি ওয়ারিশদের কোনো প্রয়োজন থাকে বা তাদের মধ্যে কারো কোনো সেবা বা এই ধরনের অন্য কোনো বিষয় দাবি করে, তাহলে অবশ্যই ওসিয়ত করা যেতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, যদি কারো কোনো সন্তান শিক্ষারত থাকে, অন্য সন্তানেরা চাকরিজীবী হয় এবং সে এখনো নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেনি, বা সন্তানদের মধ্যে কেউ পিতা-মাতার বেশি সেবা করেছে, বা কেউ তার স্ত্রীর ব্যাপারে আশঙ্কা করে যে, তার দুনিয়া থেকে চলে যাওয়ার পর তার স্ত্রীর দেখাশোনা করার কেউ থাকবে না, তাহলে সে তাদের জন্য ওসিয়ত করতে পারে। এই ওসিয়ত যেমন বন্ধু-বান্ধবদের জন্য করা যায়, সদকা ও খয়রাতের উদ্দেশ্যে করা যায়, তেমনই এই ওয়ারিশদের জন্যও করা যায়। এতে কোনো বাধা নেই।
লেখক: উস্তাদ জাভেদ আহমেদ গামিদি (বই: মাকামাত)
অনুবাদ: মাওলানা উমর ফারুক
Leave a Reply