গুইসাপ খাওয়া কি হালাল?

admin Avatar

পানাহারের ক্ষেত্রে আল্লাহ আমাদের জন্য পবিত্র বস্তুগুলো হালাল করেছেন এবং অবিত্র বস্তুগুলো হারাম করেছেন।

আল্লাহ তায়ালা বলেন:

“তারা আপনাকে জিজ্ঞেস করে, কী তাদের জন্য হালাল? বলুন, সকল পবিত্র জিনিস তোমাদের জন্য হালাল।” (সুরা মায়িদা ৫:৪)

কোনটি পবিত্র বস্তু  এবং কোনটি অপবিত্র বস্তু, সেটা মানুষ স্বভাবগতভাবেই জানে। পশু-পাখির ব্যাপারে মানুষের এই স্বভাবজাত জানাশোনাকে একটি হাদিসে এভাবে তুলে ধরা হয়েছে:

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত: “রাসুলুল্লাহ (স.) প্রত্যেক ধারালো দাঁতবিশিষ্ট হিংস্র প্রাণী এবং সকল প্রকার নখরধারী পাখি খেতে নিষেধ করেছেন।” (সহিহ মুসলিম: ১৯৩৪)

এখন আসি মূল আলেচনায়— গুইসাপ খাওয়া কি হালাল? এই মূলনীতির আলোকে দেখলে, নিঃসন্দেহে এটি একটি হারাম ও অপবিত্র প্রাণী। কারণ, আমাদের দেশে যে গুইসাপ পাওয়া যায়, সেটি একটি মাংসাশী প্রাণী। এটি সাপ, পাখি ও ছোট প্রাণী শিকার করে খায়।  গুইসাপ প্রধানত বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাস করে। এটি হাদিসে বর্ণিত ‘দব’ নয়। আরবিতে এটিকে ‘ওয়ারাল’ বলা হয় এবং আরবরা এটিকে ঘৃণা করে। এটির ইংরেজি নাম: Monitor lizard এবং বৈজ্ঞানিক নাম: Varanus।

অনেকে ভুল করে গুইসাপকে এবং হাদিসে বর্ণিত ‘দব’কে এক মনে করেন। বস্তুত বিষয়টি এমন নয়। বরং ‘দব’ আলাদা একটি প্রাণী, যা মরুভূমিতে বসবাস করে এবং গাছের পাতা, ফুল, বীজ ইত্যাদি খেয়ে জীবন ধারণ করে। এটির ইংরেজি নাম: Spiny-tailed lizard এবং বৈজ্ঞানিক নাম: Uromastyx। আরবদের মধ্যে অনেকিই দব খেয়ে থাকে।  রাসুলুল্লাহ (স.)-এর যুগেও এটি খাওয়া হত।

হাদিসে বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ (স.)-কে ‘দব’ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তখন তিনি এর উত্তরে বলেছিলেন: আমি এটি খাই না এবং হারামও বলি না। (সুনানে আবু দাউদ: ৩৭৯৭)

অন্য হাদিসে আরো বিস্তারিত আছে:

“নবী (স.)-এর সামনে একটি ভুনা ‘দব’ নিয়ে আসা হলো। তিনি তা খেতে চাইলে বলা হলো: এটি ‘দব’। তখন তিনি হাত সরিয়ে নেন। খালিদ (রা.) জিজ্ঞাসা করেন: এটি কি হারাম? তিনি বললেন: না, তবে এটি আমার সম্প্রদায়ের ভূমিতে নেই, তাই আমি এটি খেতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করি না। এরপর খালিদ (রা.) এটি খেয়ে নেন এবং নবী (স.) তা দেখেন।” (সহিহ মুসলিম: ১৯৪৬)

এখান থেকে বোঝা যায়, নবী (স.) ব্যক্তিগত রুচিবোধের কারণে এটি খাননি। কিন্তু তাঁর সামনে খাওয়া হয়েছে এবং তিনি এটিকে হারাম বলেননি। তাই ‘দব’ অবশ্যই হালাল। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এটি আমাদের দেশের গুইসাপ নয়।

লেখক: মাওলানা উমর ফারুক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *