পবিত্র কুরআনে সুরা বাকারায় আল্লাহতায়ালা রোজা রাখার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেছেন: لَعَلَّکُمْ تَتَّقُوْنَ অর্থাৎ রোজা ফরজ করা হয়েছে যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো [সুরা বাকারা, ২:১৮৩]।
এই তাকওয়া শব্দটি পবিত্র কুরআনের একটি পরিভাষা। এই পরিভাষাকে যদি আমরা সরলভাবে বর্ণনা করি, তবে এর অর্থ হবে: মানুষ তার জীবন আল্লাহতায়ালার দেয়া সীমানার মধ্যে অতিবাহিত করবে এবং অন্তরের অন্তস্থল থেকে এই উপলব্ধি বজায় রাখবে যে, যদি ভুলবশত কখনো আল্লাহর দেয়া সীমানা অতিক্রম করে, তাহলে আল্লাহ ব্যতীত আর অন্যকোন রক্ষাকর্তা নেই।
রোজা রাখার মাধ্যমে এই তাকওয়া কীভাবে অর্জন করা সম্ভব?
এটা বোঝার জন্য আমরা তিনটি বিষয় এখানে উপস্থাপন করবো।
প্রথমত, আল্লাহর দাস হওয়ার উপলব্ধি:
রোজা একজন মানুষের অন্তরে আল্লাহতায়ালার দাস হওয়ার উপলব্ধি চূড়ান্তভাবে বদ্ধমূল করে। মূলত আমাদের মানবীয় চাহিদা অর্থাৎ খাদ্য-পানীয় গ্রহণ ও যৌনমিলন থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে এই উপলব্ধি আমাদের অন্তরে পরিস্ফুটিত হয়। ফজরের আগ থেকে মাগরিবের আজান পর্যন্ত একজন বান্দা খাদ্য-পানীয় গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকে, এই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তিনি তার নফসের গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা পূরণ করতে অস্বীকৃতি জানান। পূর্ণ স্বাধীনতা থাকা সত্ত্বেও আল্লাহর ভয়ে একজন মুমিন খাদ্য-পানীয় গ্রহণ এবং যৌনমিলন থেকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নিজেকে বিরত রাখার মাধ্যমে অন্তরে ও কর্মে এই সাক্ষ্য দেন যে, তিনি আল্লাহর দাস। স্বাধীনতাকে ব্যবহার করে তিনি আল্লাহর হুকুম অমান্য করছেন না। রোজা আল্লাহর উপর বান্দার বিশ্বাস চূড়ান্ত ও জীবন্ত করে। এভাবেই একজন মানুষের অন্তরে রোজা আল্লাহর দাস হওয়ার উপলব্ধি বদ্ধমূল করে।
দ্বিতীয়ত, আল্লাহর নিকট জবাবদিহীতার ভয়:
রোজার মাধ্যমে দ্বিতীয় যে বিষয়টি একজন মানুষ অর্জন করতে পারে, তা হলো: আল্লাহর নিকট জবাবদিহিতার ভয়। সাধারণভাবে একজন মুসলমান আল্লাহর নিকট উপস্থিত হয়ে জবাবদিহিতার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে। কিন্তু রোজার মাধ্যমে আল্লাহর নিকট জবাবদিহীতার ভয় প্রকাশ পায় এবং অন্তরের মধ্যে এই উপলব্ধি চূড়ান্তভাবে গেঁথে যায়।আল্লাহ বান্দাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন, চাইলে সে যখন ইচ্ছে রোজা ভেঙে ফেলতে পারে। প্রচন্ড গরমে পানি পান করতে পারে। নির্জনে স্ত্রীর সাথে সহবাস করতে পারে। কিন্তু একজন রোজাদার আল্লাহর নিকট জবাবদিহীতার ভয়ে নফসের চাহিদাগুলো থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ বিরত রাখে। দীর্ঘ এক মাস এই অনুশীলন একজন মুমিনের অন্তরে জবাবদিহীতার ভয়কে পুষ্পের মত ফুটিয়ে তোলে। ফুটন্ত এই পুষ্পের সুঘ্রাণ পরবর্তী দিনগুলোতে তার জীবনে আল্লাহর সঠিক বান্দা হওয়ার বাসনা জাগ্রত রাখে।
তৃতীয়ত, ধৈর্যের অনুশীলন:
আল্লাহর নিকট জবাবদিহীতার ভয় এবং অন্তরে তাকওয়ার উপলব্ধির জন্য জরুরি বিষয় হচ্ছে: ধৈর্যধারণ। রোজা একজন মুমিনকে ধৈর্যধারণের শিক্ষা দেয়। শুধু কি শিক্ষা দেয়? শুধু শিক্ষা দেয় না, বরং ধৈর্যের অনুশীলনের জন্য রোজা ব্যতীত অন্যকোন মাধ্যম বা এর চেয়ে উত্তম কোনো পদ্ধতি পৃথিবীতে বর্তমান নেই। আল্লাহ এই পৃথিবী মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য তৈরি করেছেন। এই পরীক্ষা স্কুল-কলেজের গতানুগতিক পরীক্ষার মত নয়। এটা খোদায়ি পরীক্ষা। এই পরীক্ষার দুটি দিক রয়েছে, একটি হচ্ছে: আল্লাহ মানুষকে স্বাধীনতা, কর্তৃত্ব ও আকাঙ্ক্ষা দিয়ে তৈরি করেছেন। অপরদিকে তিনি ধর্মের মাধ্যমে মানুষকে একটি নির্দিষ্ট সীমানার দিকে আহ্বান জানাচ্ছেন। স্বাধীনতা ও আকাঙ্ক্ষার পথ পরিত্যাগ করে আল্লাহর সীমানার মধ্যে জীবন অতিবাহিত করার জন্য প্রয়োজন চূড়ান্ত পর্যায়ের ধৈর্যের। রোজা মূলত এই ধৈর্যধারণ করার একটি উত্তম অনুশীলন। পৃথিবীতে রয়েছে অন্যায় এবং মানুষের অন্তর অন্যায়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়। কিন্তু আল্লাহ অন্যায়ের পথে যেতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহতায়ালার এই হুকুম মানতে হলে ধৈর্যের বিকল্প নেই। রোজা মূলত এই ধৈর্যটাই আমাদের শিক্ষা দেয়। ধৈর্য ব্যতীত কখনোই তাকওয়া অর্জিত হতে পারে না।
রোজার বিধি-বিধান
পূর্ববর্তী নবীদের দ্বীনে রোজার যে বিধান সর্বদা প্রচলিত ছিল, মুসলমানদের সেই বিধান অনুযায়ী আল্লাহ রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। কুরআনে বলা হয়েছে, ঈমানদারদের উপর রোজা ঠিক সেভাবে ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে তাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরজ করা হয়েছিল। আরও বলা হয়েছে, এটা কয়েকটি নির্দিষ্ট দিন, যা এই ইবাদতের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এই কথা অবশ্য মানুষকে স্বস্তি দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। অর্থাৎ রোজার বরকত ও কল্যাণের কথা বিবেচনা করলে বারো মাসের মধ্যে ৩০ বা ২৯ দিন কোনো দীর্ঘ সময় নয়। বরং এটা মাত্র কয়েকটি গণনাযোগ্য দিন, তাই আতঙ্কিত বা মনক্ষুণ্ন না হয়ে এই দিনগুলোর পূর্ণ কল্যাণ মানুষের গ্রহণ করা উচিত। এরপর রোজার শিথিলতার বিধান বর্ণনা করা হয়েছে। কুরআনে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যারা অসুস্থতা বা সফরের কারণে রোজা রাখতে পারবে না, তারা অন্য দিনগুলোতে রোজা রেখে এই সংখ্যা পূরণ করবে অথবা এক রোজার পরিবর্তে একজন দরিদ্রকে আহার করিয়ে রোজার কাফফারা আদায় করবে।
এরপর বলা হয়েছে:
فَمَنْ تَطَوَّعَ خَیْرًا فَھُوَخَیْرٌ لَّہٗ، وَاَنْ تَصُوْمُوْا خَیْرٌ لَّکُمْ، اِنْ کُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
“যে স্বেচ্ছায় কোনো সৎকাজ করে, তা তার জন্য আরও উত্তম। আর যদি তোমরা রোজা রাখো, তবে তা তোমাদের জন্য আরও কল্যাণকর, যদি তোমরা বোঝো।” (সুরা বাকারা, ২:১৮৪)
অর্থাৎ ফিদিয়া হলো ন্যূনতম দাবি, যা সামর্থ্যবানদের অবশ্যই আদায় করতে হবে। তবে কেউ যদি একাধিক দরিদ্র ব্যক্তিকে আহার করায় বা তাদের জন্য অন্যকোন সৎকর্ম করে, তাহলে তা আরও কল্যাণকর। কিন্তু আল্লাহর দৃষ্টিতে এর চেয়েও উত্তম কাজ হলো; ফিদিয়া দেয়ার পরিবর্তে অন্য দিনগুলোতে কাজা রোজা আদায় করা।
এরপর আমরা দেখতে পাই পরবর্তী আয়াত شَہْرُ رَمَضَانَ الَّذِیْٓ اُنْزِلَ فِیْہِ الْقُرْاٰنُ দিয়ে শুরু হয়েছে এবং এখানে ফিদিয়া দেয়ার বিধান বাতিল করা হয়েছে। অতএব পূর্বের বিধান হুবহু পুনরুক্ত করা হয়েছে, তবে এর মধ্যে থেকে وَعَلَی الَّذِیْنَ یُطِیْقُوْنَهُ থেকে إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ পর্যন্ত অংশটি অপসারণ করা হয়েছে। যেহেতু রমজানের মতোই সাধারণ দিনে রোজা রাখা কঠিন, তাই যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ এর জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে উঠেনি, ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ এটা বাধ্যতামূলক করেননি। কিন্তু পরবর্তীতে ফিদিয়ার এই অনুমতি বাতিল করা হয়েছে, যেন মানুষ রোজার সংখ্যা পূর্ণ করে এবং এতে লুকিয়ে থাকা কল্যাণ থেকে বঞ্চিত না হয়। এটা রোজার মূল বিধান।
এরপর মানুষের মনে রমজান সম্পর্কে বেশকিছু প্রশ্ন তৈরি হয়েছিল। তার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ছিল, রমজান মাসের রাতে স্ত্রীর সাথে সহবাস করা যাবে কিনা? এই প্রশ্ন তৈরি হওয়ার কারণ সম্ভবত এটাই ছিল যে, ইহুদিদের রোজা ইফতারের পর পুনরায় শুরু হতো, তারা রোজার রাতে খাদ্য গ্রহণ এবং স্ত্রীর সাথে সহবাস করাকে বৈধ মনে করতো না। মুসলিমরা মনে করেছিল, তাদের জন্যও হয়তো একই বিধান প্রযোজ্য। কিছু মুসলমান এই বিষয়কে বিধান হিসেবে মেনে নিয়ে এর বিপরীত কাজ করেছিল। বিষয়টি ছিল দৃষ্টিকটু, কারণ যদি কেউ নিজের চিন্তাভাবনা বা অনুমানের ভিত্তিতে কোনকিছুকে দ্বীন ও শরিয়তের দাবি মনে করে, তবে সেটা শরিয়তের বিধান না হলেও ঐ ব্যক্তির জন্য এই বিধান লংঘন করা বৈধ নয়। কুরআনে এই বিষয়কে নিজের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে,
أُحِلَّ لَكُمْ لَيْلَةَ الصِّيَامِ الرَّفَثُ إِلَىٰ نِسَائِكُمْ ۚ هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ ۗ عَلِمَ اللَّهُ أَنَّكُمْ كُنتُمْ تَخْتَانُونَ أَنفُسَكُمْ فَتَابَ عَلَيْكُمْ وَعَفَا عَنكُمْ ۖ فَالْآنَ بَاشِرُوهُنَّ وَابْتَغُوا مَا كَتَبَ اللَّهُ لَكُمْ ۚ وَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الْأَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِ ۖ ثُمَّ أَتِمُّوا الصِّيَامَ إِلَى اللَّيْلِ ۚ وَلَا تُبَاشِرُوهُنَّ وَأَنتُمْ عَاكِفُونَ فِي الْمَسَاجِدِ ۗ تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ فَلَا تَقْرَبُوهَا ۗ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ آيَاتِهِ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ
“(তোমরা মনে মনে জানতে চাচ্ছো, তাই আমি তোমাদেরকে জানিয়ে দিচ্ছি যে), রোজার রাতে তোমাদের স্ত্রীদের কাছে যাওয়া তোমাদের জন্য বৈধ রাখা হয়েছে। তারা তোমাদের জন্য পোশাক আর তোমরা তাদের জন্য পোশাক। আল্লাহ দেখলেন যে, তোমরা নিজেদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করছো, তাই তিনি তোমাদের প্রতি দয়াপরবশ হয়েছেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। অতএব এখন (নির্দ্বিধায়) তাদের কাছে যাও এবং (এর ফলাফলস্বরূপ) আল্লাহ তোমাদের জন্য যা কিছু লিখে রেখেছেন, সেটার সন্ধান করো। আর খাও ও পান করো, যতক্ষণ না রাতের কালো রেখা থেকে ভোরের সাদা রেখা তোমাদের সামনে পুরোপরি ভেসে ওঠে। এরপর রাত পর্যন্ত রোজা পূর্ণ করো। তবে মসজিদে ইতেকাফরত থাকলে (রাতের বেলায়ও) স্ত্রীদের কাছে যেও না। এগুলো আল্লাহর বেঁধে দেয়া সীমারেখা, তাই তোমরা এগুলোর কাছেও যেও না। এভাবেই আল্লাহ মানুষের জন্য তাঁর আয়াতগুলো বর্ণনা করেন, যেন তারা তাকওয়া অবলম্বন করতে পারে। (সুরা বাকারা, ২:১৮৭)
এই আয়াতের মাধ্যমে আমরা রোজার যে বিধান জানতে পারি তা নিজে বর্ণনা করা হলো:
শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য খাদ্য গ্রহণ ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকাকে শরিয়তের পরিভাষায় রোজা বলা হয়। এই বিধিনিষেধ ফজর থেকে রাতের আগমন পর্যন্ত। সুতরাং, রোজার রাতগুলোতে খাদ্য গ্রহণ এবং স্ত্রীদের কাছে গমন করা সম্পূর্ণ বৈধ। রোজার জন্য রমজান মাসকে নির্ধারিত করা হয়েছে। তাই একজন মুসলিমের জন্য পুরো মাস রোজা রাখা ফরজ। যদি কেউ অসুস্থতা, সফর বা অন্য কোনো কারণে রমজান মাসে রোজা রাখতে না পারে, তবে অন্য দিনগুলোতে রোজা রেখে কাজা আদায় করবে।
ঋতুস্রাব ও প্রসবকালীন অবস্থায় রোজা রাখা নিষেধ। তবে রোজাগুলো পরবর্তী সময়ে অবশ্যই পূরণ করতে হবে। রোজার পরিপূর্ণতা ও চূড়ান্ত উৎকর্ষ হলো ইতেকাফ। যদি আল্লাহ কারও জন্য ইতেকাফে বসা সহজ করে দেন, তবে তার উচিত রমজানের দিনগুলোতে যতটা সম্ভব দুনিয়াবি ব্যস্ততা ত্যাগ করে মসজিদে অবস্থান নেয়া, শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদতে মনোনিবেশ করা এবং কোনো জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মসজিদ থেকে বের না হওয়া। যদি কেউ ইতেকাফে বসে, তাহলে রমজান মাসের রাতে তার জন্য খাদ্য গ্রহণে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই, তবে স্ত্রীদের কাছে গমন করা বৈধ নয়। ইতেকাফ অবস্থায় স্ত্রীর সাথে সহবাস করাকে আল্লাহ নিষেধ করেছেন। রোজার এই বিধান মুসলমানদের সর্বসম্মত ঐক্যমত্য (ইজমা) এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে চলে আসা নিরবচ্ছিন্ন আমল (তথা তাওয়াতুরে আমলি) দ্বারা প্রমাণিত।
এছাড়াও রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জ্ঞান ও কর্মের মাধ্যমে রোজার যে বিধান আমাদের কাছে পৌঁছেছে, তা নিচে উল্লেখ করা হলো:
১. চাঁদ দেখার মাধ্যমে রমজান মাস শুরু হবে। রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশ দিয়েছেন, “এই মাস ২৯ দিনেরও হতে পারে, সুতরাং চাঁদ দেখলে রোজা শুরু করো এবং চাঁদ দেখলে ইফতার করো। যদি আকাশ পরিষ্কার না থাকে, তাহলে শাবানের ৩০ দিন পূর্ণ করো।” (মুসলিম, হাদিস নং ২৫০৩, ২৫১৪)
২. রমজান মাস শুরু হওয়ার এক বা দুই দিন আগে রোজা রাখা উচিত নয়। রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এটাকে পছন্দ করেননি এবং বলেছেন: “তবে, যে ব্যক্তি সাধারণত ঐ দিন রোজা রাখে, সে ব্যতিক্রম।” (বুখারি, হাদিস নং ১৯১৪, মুসলিম, হাদিস নং ২৫১৮)।
৩. সাহরি খাওয়ার জন্য উঠা উচিত। রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “সাহরি খাও, কারণ সাহরি খাওয়ার মধ্যে বরকত রয়েছে।” (বুখারি, হাদিস নং ১৯২৩, মুসলিম, হাদিস নং ২৫৪৯)
৪. রোজা অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে সহবাস ব্যতীত সব ধরনের ভালোবাসার প্রকাশ বৈধ। মুমিনদের মাতা হযরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রোজা অবস্থায় চুম্বন করতেন এবং আমাকে নিজের কাছে আঁকড়ে ধরতেন। (বুখারি, হাদিস নং ১৯২৭, মুসলিম, হাদিস নং ২৫৭৬)
৫. গোসল ফরজ হলেও ঐ অবস্থায় রোজা রাখা যায়। হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিছু কিছু সময় রোজা রাখতেন এবং ফজরের সময় গোসল করতেন। (বুখারি, হাদিস নং ১৯৩১, মুসলিম, হাদিস নং ২৫৮৯)
৬. কেউ যদি ভুলে কিছু খেয়ে ফেলে, এতে তার রোজা ভেঙে যাবে না। রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “এটা তো আল্লাহই তাকে খেতে এবং পান করিয়েছেন।” (বুখারি, হাদিস নং ১৯৩৩, মুসলিম, হাদিস নং ২৭১৬)
৭. রমজানের দ্বিতীয় বা তৃতীয় দশকে ইতেকাফ করতে হয় এবং পুরো দশদিনের জন্য ইতিকাফ করা উত্তম। তবে ২৯ দিনে মাস হলে ভিন্ন কথা। হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই পদ্ধতিতে ইতেকাফে বসতেন। (বুখারি, হাদিস নং ২০২৫, ২০২৭, মুসলিম, হাদিস নং ২৭৭২, ২৭৮০)
৮. জেনে বুঝে রোজা ভাঙা মারাত্মক পাপ। হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি, যদি কেউ এমনটি করে তবে কুরআনে বর্ণিত যাহারের জন্য নির্ধারিত কাফফারা তাকে আদায় করতে হবে। তবে হাদিস থেকে আমরা এটাও জানতে পারি যে, এই কাফফারা আদায় করতে কেউ সক্ষম না হলে, তাদের জন্য রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তেমন জোর দেননি। (বুখারি, হাদিস নং ১৯৩৬, মুসলিম, হাদিস নং ২৫৯৫)।
লেখক: জাভেদ আহমেদ গামিদি
অনুবাদ: আল মানার ইনস্টিটিউট
এই প্রবন্ধটি ত্রৈমাসিক আল-ইশরাক বাংলার মার্চ ২০২৫ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল
Leave a Reply